জ্ঞাতি সম্পর্কের সামাজিক ভূমিকা আলোচনা কর।
জ্ঞাতি সম্পর্কের সামাজিক গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, জ্ঞাতি সম্পর্কের সামাজিক তাৎপর্য বর্ণনা কর।
অথবা,
উত্তর৷ ভূমিকা : এদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং আত্মীয়তার বন্ধন এখানে খুবই দৃঢ় পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলা এ জাতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাই বাংলাদেশের সমাজে জ্ঞাতি সম্পর্কের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।জ্ঞাতি সম্পর্কের সামাজিক ভূমিকা : নিম্নে জ্ঞাতি সম্পর্কের সামাজিক ভূমিকা আলোচনা করা হলো :
১. সমাজ কাঠামো : জ্ঞাতি সম্পর্ক সমাজ কাঠামোর চাবিকাঠি। জ্ঞাতি সম্পর্কই হচ্ছে মূলভিত্তি যার উপর নির্ভর করছে পারস্পরিক সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে মানুষের দেনা-পাওনা, দায়িত্ব কর্তব্য বা দায়-দাবির সম্পর্ক।
২. পরিবার সংগঠন : পরিবার সমাজের মূলকেন্দ্র বিন্দু। পরিবার ছাড়া সমাজকে কল্পনা করা যায় না। বৈবাহিক সূত্রের জ্ঞাতি সম্পর্ক ও পরবর্তীতে রক্ত সম্পর্কের জ্ঞাতি সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় বিবাহের মাধ্যমে। আর এর মাধ্যমে
বংশবৃদ্ধি তথা সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের নিয়ে সুন্দরভাবে জীবনধারণ করার উপায় বের করে দেয়।
৩. অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য : অর্থনীতির প্রধান কাজ উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ। অর্থনীতির এই তিনটি কাজেই জ্ঞাতি সম্পর্ক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে জ্ঞাতিদের সাহায্য একান্ত অপরিহার্য। গ্রাম প্রধান বাংলাদেশে একজন কৃষক কোনো ক্রমেই আত্মীয়দের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া উন্নতি করতে পারে না।
৪. ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে : ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। মানুষ আপনজন ছাড়া অন্য মানুষকে বিশ্বাস করতে চায় না। সেজন্য ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়কে সম্পৃক্ত রেখে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এদেশের ব্যবসায়ী মহল।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা : সমাজে বাস করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক নিরাপত্তা। সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে জনজীবন ব্যাহত হয়। যেকোনো বিপদ আপদে মানুষ তার আত্মীয়দের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। এটি মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।
৬. শিক্ষা ক্ষেত্রে : বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে জ্ঞাতি সম্পর্কে প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করি যে, কোনো শ্রেণির মেধাবী ছাত্র তার জ্ঞাতি ছাত্রকে অন্য যেকোনো ছাত্রের চেয়ে লেখাপড়ার বিষয়ে
বেশি সহায়তা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, জ্ঞাতি সম্পর্ক আমাদের দেশে ভালো ও মন্দ উভয় দিক নির্দেশনা দেয়। তবে আমরা বলতে পারি যে, আমরা যদি স্বজন-প্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে জ্ঞাতি সম্পর্ককে শক্তিশালী করে কাজে লাগাই তবে
আমাদের এ জ্ঞাতি সম্পর্ক সমালোচনার ঊর্ধ্বে স্থান পাবে।