Download Our App

জৈন স্যাদবাদ বলতে কী বুঝ?

অথবা, বস্তু সম্পর্কে সসীম মানুষের অবধারণ কেমন?
অথবা, জৈন মতে স্যাদবাদ সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, জৈন মতে ‘স্যাদবাদ’ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
যাবতীয় প্রাণবান পদার্থের প্রতি সহানুভূতি জৈনধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জৈনদের অন্য সব দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা। জৈন দার্শনিকদের মতে জগতের প্রত্যেক বস্তুই “অনেকান্ত” অর্থাৎ তাদের অনেক দিক আছে। একই বস্তু বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন প্রকার মনে হয়। একে অনেকান্তবাদ বলে। এ অনেকান্তবাদের সাথে
যুক্ত হয়ে আছে জৈন দর্শনের স্যাদবাদ।
স্যাদবাদ : জৈনগণের মতে, একটি বস্তুর অসংখ্য গুণ আছে। একমাত্র সর্বজ্ঞ মানুষ তার ‘কেবল জ্ঞান’ দ্বারা বস্তুর অসংখ্য গুণকে এক সাথে জানতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সসীম জীব বলে দৈনন্দিন জীবনে কোন বস্তু সম্পর্কে যেসব অবধারণ রচনা করে তা কোন একটি দৃষ্টিভঙ্গি হতে এ বস্তুর কোন একটি গুণ সম্পর্কে সত্য হতে পারে সর্বভাবে সত্য হতে
পারে না। মানুষ নিজেকে অপূর্ণতার কথা ভুলে গিয়ে মনে করে যে, কোন বস্তু সম্পর্কে তার অবধারণ সম্পূর্ণ সত্য। ফলে মানুষে মানুষে বাদানুবাদ হয়। তাই জৈনগণ বলেন, কোন বস্তু সম্পর্কে কোন অবধারণ প্রকাশ করার সময় তাকে শর্তহীন না করে শর্তসহ করা উচিত। এ শর্ত হলো স্যাৎ। স্যাৎ শব্দের অর্থ হলো ‘সম্ভবত’ প্রতিটি অবধারণ প্রকাশ করার সময়
স্যাৎ এ বিশেষণ যোগ করে দেয়া উচিত। যেমন- “হস্তি কুলার মতো” একথা না বলে- সম্ভবত হস্তি কুলার মতো, এ কথা বলা উচিত। জৈনদের মতে, প্রতিটি অবধারণে যদি স্যাৎ শব্দটি থাকে, তবে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, অবধারণটি আংশিক সত্য এবং আলোচ্য বস্তু সম্পর্কে বিকল্প অবধারণও সত্য হতে পারে। জৈনদের এ মতবাদের নামই স্যাদবাদ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্যাদবাদ অনুসারে সসীম ও অপূর্ণ মানুষ কোন সম্পর্কে যে অবধারণ রচনা করে সে অবধারণ বস্তুর কোন একটি দিক হতে সত্য। অর্থাৎ এর সত্যতা শর্তাধীন। কিন্তু সর্বদিক হতে সত্য নয়। অর্থাৎ।এর সত্যতা নিঃশর্ত নয়।