জৈন মতের অনুযায়ী, গুণ এবং দ্রব্যে পার্থক্য খোলামূলক এবং গুহ্যমূলক দৃষ্টিকোণ দ্বারা বিবেচিত হয়। জৈন ধর্মের অনুযায়ী, পৃথিবীতে থাকা সকল জীবজন্তুই জীবনীয় এবং সকল জীবের একই মাধ্যমে সুখ-দুঃখ ভোগে আবদ্ধ থাকে। এছাড়াও, জৈন ধর্মে কোনও প্রকার আত্মহত্যা, হিংসা বা অধঃপতন স্বীকৃত হয় না।
গুণের পার্থক্য:
- অহিংসা (Non-violence): জৈন মতে অহিংসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। জৈন ধারণায়, সকল জীবজন্তুকে আত্মহত্যা বা অপরকে হত্যা করা নিষেধ।
- সত্য (Truth): সত্যের মূল্য জৈন ধর্মে অত্যন্ত উচ্চ রকম দেওয়া হয়। ভৃত্য বা অসত্য বলা এবং অসত্য বলার পরিণাম হিংসা হতে পারে এবং এটি সংসার বন্ধন বা বন্ধনবদ্ধতা বৃদ্ধি করতে পারে।
- অস্তেয় (Non-stealing): জৈন ধর্মে অস্তেয় বা চুরি করা একটি অত্যন্ত দুর্ভৃত্য গুণ। এটি অন্যের সম্পদ বা সংসার থেকে বিনা অনুমতি ও পরোপকারের ক্ষেত্রে লাভ করা নিষেধ।
- ব্রহ্মচর্য (Chastity): ব্রহ্মচর্য বা ব্রহ্মচর্যানুষ্ঠান হলো প্রমেয় বা সেক্সুয়াল সুযোগ সাধনে মিতব্যয় এবং এটির মাধ্যমে অবশ্য পর্যাপ্ত নির্জনতা বজায় রাখা।
- অপরিগ্রহ (Non-possession): জৈন মতে অপরিগ্রহ বা অধিগ্রহশূন্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মূল্যের একটি অংশ। এটি ব্যক্তির জীবনে অতি প্রয়োজনীয় বস্তুগুলির মাধ্যমে তার অস্তিত্ব বজায় রাখার আদর্শ এবং এটি সহিত অধিগ্রহ থাকতে উৎসাহিত হয়।
দ্রব্যের পার্থক্য:
জৈন মতে দ্রব্য বা মাদ্ধত্যমের পার্থক্য খোলামূলক এবং গুহ্যমূলক দৃষ্টিক
োণ দ্বারা বিবেচিত হয়।
- খোলামূলক দৃষ্টিকোণ: জৈন মতে মুক্তি প্রাপ্তি হলো মোক্ষ বা নির্বাণের মাধ্যমে, এবং এটি মাদ্ধত্যম কর্মের সংকীর্ণতা হতে হবে। মুক্তি প্রাপ্তির জন্য ব্যক্তি অতি সহিষ্ণু এবং মৃদু হতে হবে, এবং এটির জন্য কর্মে কোনও আসক্তি থাকতে নয়।
- গুহ্যমূলক দৃষ্টিকোণ: জৈন মতে মোক্ষে পৌঁছাতে হলে কর্মের বংশগত সংকীর্ণতা এবং আসক্তি থাকতে নয়। কর্মের সাথে আসক্তি বা মোহের সংকীর্ণতা নির্বাচন করা হবে না।
সৃষ্টি থেকে মোক্ষ অর্জনে সংসার বন্ধন ছিঁচুনো এবং মোক্ষের দিকে পূর্ণ প্রতিবদ্ধ হতে জৈন মতে কর্ম এবং জীবনের অন্যান্য দিকের প্রতি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা হয়।
জৈন দর্শনে, গুণ ও দ্রব্য হল দুটি ভিন্ন ধারণা। গুণ হল দ্রব্যের বিশেষ অবস্থা বা ধর্ম। দ্রব্য হল স্বতন্ত্র অস্তিত্বসম্পন্ন বস্তু।
জৈন দর্শনে, দ্রব্যের তিনটি লক্ষণ হল:
- স্বতন্ত্র অস্তিত্ব
- জ্ঞানের উপযোগিতা
- পরিবর্তনশীলতা
গুণ হল দ্রব্যের এমন ধর্ম যা দ্রব্যের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। গুণ দ্রব্যের মধ্যে আশ্রিত থাকে এবং দ্রব্যের সাথে পরিবর্তিত হয়।
জৈন দর্শনে, সাতটি দ্রব্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে:
- জীব
- পুদল
- ধর্ম
- অধর্ম
- আকাশ
- কাল
- সর্বজ্ঞ
জীব হল সচেতন দ্রব্য। পুদল হল অচেতন দ্রব্য। ধর্ম হল দ্রব্যের গতিশীলতা। অধর্ম হল দ্রব্যের স্থিতিশীলতা। আকাশ হল শূন্যস্থান। কাল হল সময়। সর্বজ্ঞ হল ঈশ্বর।
এই সাতটি দ্রব্যের প্রত্যেকটির নিজস্ব গুণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জীবের গুণ হল জ্ঞান, অনুভূতি, ইচ্ছা এবং কর্ম। পুদলের গুণ হল রূপ, স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ এবং শব্দ। ধর্মের গুণ হল গতি। অধর্মের গুণ হল স্থিতি। আকাশের গুণ হল অবগাহ। কালের গুণ হল বর্তনা।
সুতরাং, জৈন মতে, গুণ ও দ্রব্যের মধ্যে মূল পার্থক্য হল:
- গুণ হল দ্রব্যের বিশেষ অবস্থা বা ধর্ম।
- দ্রব্য হল স্বতন্ত্র অস্তিত্বসম্পন্ন বস্তু।
- গুণ দ্রব্যের মধ্যে আশ্রিত থাকে এবং দ্রব্যের সাথে পরিবর্তিত হয়।
জৈন দর্শনে, গুণ ও দ্রব্য দুটিই বাস্তব অস্তিত্বসম্পন্ন। তবে, গুণ হল দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল। দ্রব্য ছাড়া গুণ অস্তিত্বশীল হতে পারে না।