অথবা, জৈন মত অনুযায়ী দ্রব্যের শ্রেণিবিন্যাস কর।
অথবা, জৈন মতে, দ্রব্যের প্রকারভেদ লিখ।
অথবা, জৈন মতে, দ্ৰব্য কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর৷৷ ভূমিকা : জৈন দর্শনে দ্রব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। জৈনরা প্রত্যেক দ্রব্যে দুই জাতের ধর্মের অস্তিত্বের কথা বলেন- নিত্য ও অনিত্য। নিত্য ধর্ম দ্রব্যের মধ্যে সর্বদাই থাকে এবং এ ধর্ম ছাড়া দ্রব্যকে কল্পনা করা যায় না। কিন্তু দ্রব্যের অনিত্য ধর্ম পরিবর্তনশীল। অনিত্য ধর্মের পরিবর্তনের ভিতর দিয়েই দ্রব্য পরিবর্তিত হয়। দ্রব্য সাধারণত ধর্ম বলতে গুণকে বুঝায় এবং ধর্মী বলতে গুণের অধিকারীকে বুঝায়। সাধারণ অর্থে এ ধর্মীকেই দ্রব্য বলা হয়। জৈনগণ দ্রব্যকেও সাধারণ অর্থেই গ্রহণ করেছেন। জৈনদের মতে দ্রব্য গুণ ও পর্যায় বিশিষ্ট। গুণ ছাড়া যেমন দ্রব্যকে উপলব্ধি করা যায় না, তেমনি দ্রব্য ব্যতীত গুণের অস্তিত্বও উপলব্ধি করা যায় না। এ দ্রব্যই হচ্ছে জগতের মূল উপাদান।
দ্রব্যের শ্রেণীবিভাগ : জৈনগণ দ্রব্যকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
১. অস্তিকায় ও
২. অনস্তিকায়।
অস্তিকায় দ্রব্যকে আবার দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ক. জীব ও খ. অজীব।
জৈন মর্তে, চেতনাসম্পন্ন দ্রব্যই জীব। এ জীব আবার দু’প্রকার। যথা :
ক. মুক্ত জীব ও খ. বদ্ধ জীব।
যেসব জীব কর্মের বন্ধন হতে মুক্ত হয়েছে এবং যারা জন্ম মৃতে্যুর অধীন নয় তারা মুক্ত জীব। আর যেসব জীব জন্ম মৃত্যু হ্রাসবৃদ্ধির অধীন এবং কর্মজনিত বাসনার জন্য বারংবার দেহ ধারণ করে তারা বদ্ধ জীব। যাদের প্রাণ নেই তাদের অজীব বলা হয়। অজীব চার প্রকার। যথা : ধর্ম, অধর্ম, আকাশ ও পুদগল। বদ্ধ জীব আবার দু’প্রকার। যথা :
ক. এস এবং খ. স্থাবর।
বদ্ধ জীবের মধ্যে যারা নড়াচড়া করতে পারে তারা এস জীব। আর বদ্ধ জীবের মধ্যে যারা নড়াচড়া করতে পারে না এবং এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট তারা স্থাবর জীব।
এস জীব আবার চার প্রকার। যথা :
১.পাঁচ ইন্দ্ৰিয় বিশিষ্ট (যেমন- পশু ও মানুষ)।
২. চার ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট (যেমন- মশ ও মধুকর)।
৩. তিন ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট (যেমন— জোঁক ও পিপীলিকা)।
৪. দুই ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট (যেমন- শামুক ও কীট)।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জৈনদের দ্রব্য সম্পর্কীয় আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জৈনরা দ্রব্যকে বিশ্লেষণ করে অস্তিকায়, অনস্তিকায় ভাগ করে তারপর বিভিন্নভাবে দ্রব্যকে অভিহিত করেছেন। জৈন দর্শন একটি অতি প্রাচীন দর্শন । এ দর্শনের মূল হচ্ছে জয়ী। আর এ ‘জয়ী’ দর্শন ভারতীয় দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছে।