অথবা, জৈনরা কীভাবে প্রমাণ সম্পর্কে চার্বাকদের মতবাদ খণ্ডন করেন?
অথবা, প্রমাণ সম্পর্কে চার্বাকদের মতবাদ জৈনরা কীভাবে খণ্ডন করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জৈন ও চার্বাক সম্প্রদায় উভয়ই নাস্তিক ও বস্তুবাদী। জৈনগণ প্রত্যক্ষ অনুমান ও শব্দকে প্রমাণরূপে স্বীকার করেন। কিন্তু চার্বাক মতে, একমাত্র প্রত্যক্ষই প্রমাণ, অনুমান ও শব্দ প্রমাণ নহে। চার্বাকদের এ মতবাদ জৈনরা বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে খণ্ডন করেন যা নিম্নে আলোচনা করা হলো। প্রথমত, জৈনগণ বলেন, যে যুক্তির সাহায্যে চার্বাকগণ অনুমান ও শব্দকে প্রমাণ রূপে গ্রহণ করা যায় না বলেছেন, সে একই যুক্তির সাহায্যে প্রত্যক্ষকেও প্রমাণরূপে গ্রহণ করা যায় না। চার্বাক মতে, অনুমান ও শব্দ জ্ঞান কোন কোন সময় ভুল প্রমাণিত হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ জ্ঞানও কোন কোন সময় ভুল প্রমাণিত হয়। যেমন- অন্ধকারে রজ্জুকে স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করা।
দ্বিতীয়ত, চার্বাকদের মতে অনুমানলব্ধ জ্ঞান পরোক্ষ ও অস্পষ্টতাই অযথার্থ। কিন্তু জৈনগণ বলেন, প্রত্যক্ষ জ্ঞানও পরোক্ষ, যেহেতু এটি ইন্দ্রিয় নির্ভর। পরোক্ষ জ্ঞান যদি অযথার্থ হয়, তবে প্রত্যক্ষ জ্ঞানও অনুমানের মতো অযথার্থ হতে বাধ্য।
তৃতীয়ত, কোন কোন ক্ষেত্রে অনুমান ও শব্দ জ্ঞান ভুল হয়েছে দেখে চার্বাকগণ সামান্য সিদ্ধান্ত পৌঁছান যে, সর্বক্ষেত্রে অনুমান ও
শব্দ জ্ঞান ভুল হবে । চার্বাকদের এ সিদ্ধান্ত অনুমানের সাহায্যে পাওয়া, অনুমানলব্ধ জ্ঞান যদি ভুল হয় তবে তাদের এ সিদ্ধান্তও ভুল।
চতুর্থত, চার্বাকগণ অনুমানের উপর নির্ভর করে ঈশ্বর, আত্মা ও পরলোকের সত্তা অস্বীকার করেন। এ সম্পর্কে চার্বাকগণের অনুমান নিম্নরূপ :
যাহা প্রত্যক্ষ গোচর নহে, তার সত্তা নাই ঈশ্বর, আত্মা ও পরলোক প্রত্যক্ষ গোচর নহে ঈশ্বর, আত্মা ও পরলোকের সত্তা নাই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাকগণ প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে অনুমানের সাহায্য গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, চার্বাকগণ অনুমানের বিরুদ্ধে যাই বলুন না কেন, তারা অনুমানকে পরোক্ষ প্রমাণরূপে স্বীকার করেছেন।