অথবা, জেনারেল এম আতাউল গণি ওসমানী সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : স্বাধীনতা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে যে ক’জন ব্যক্তি অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী তন্মমধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এম. এ. জি. ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন।
জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী : ১৯১৮ সালের ১ নভেম্বর সুনামগঞ্জে তাঁর জন্ম। তিনি ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৩৮ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেন। একই সময় তিনি রাজকীয় সামরিক বাহিনীতে জেন্টলম্যান ক্যাডেট নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে দেরাদুনে ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক একাডেমি থেকে সামরিক কোর্স সম্পন্ন করে রাজকীয় বাহিনীতে কমিশন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪১ সালে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি বার্মা রণাঙ্গনে ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনায়ক রূপে যুদ্ধ করেন। ভারত বিভাগের পর তিনি ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। আতাউল গণি ওসমানী ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সত্তরের নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার কর্তৃক তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী।ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ পদোন্নতি কার্যকর হয়। ১৯৭২ সালে তিনি অবসর নেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে তিনি নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আজীবন তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। ওসমানী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী ছিলেন এদেশের একজন কৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের কারণে তিনি এদেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।