অথবা, জৈনদের মতে আত্মার বা জীবের মুক্তি কী?
অথবা, জীব বা আত্মার মুক্তি বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : জৈন দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জীবের বন্ধন এবং সে বন্ধন হতে তার মুক্তি। জৈনগণ যদিও জ্ঞানবিজ্ঞান ও পরাবিজ্ঞানের আলোচনা করেছেন। তবু আলোচনা তাদের মূল লক্ষ্য নয়। তাদের মূল লক্ষ্য হলো মুক্তি লাভ ৷ বন্ধন মুক্তি এবং পূর্ণতালাভই মানুষের জীবনের পরম পুরুষার্থ। এ মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজন সম্যক চরিত্র গঠন।
জীব বা আত্মার মুক্তি : জৈনগণ বলেন, কামনা বাসনাজনিত কর্মশক্তির প্রভাবে জীব বা আত্মা পুদগলের সংস্পর্শে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বাধা অবস্থায় আত্মার স্বরূপ প্রচ্ছন্ন থাকে। সুতরাং আত্মা পুদগল মুক্ত হলে আত্মার মুক্তি সম্ভব যা আত্মার পরম লক্ষ্য। এখন প্রশ্ন আত্মার মুক্তি কি করে সম্ভব?
জৈন মতে, আত্মার মুক্তির জন্য প্রয়োজন আত্মায় পুদগলের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং পূর্বসঞ্চিত পুদগলের অপসারণ করা।এখন প্রশ্ন আত্মার পুদগলের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং পূর্বসঞ্চিত পুদগলের অপসারণ কেমন করে সম্ভব? জৈন মতে, কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্যই আত্মার সাথে পুদগলের সংযোগ ঘটে। এ কামনা বাসনার উৎপত্তি হয় অজ্ঞানতা হতে। আত্মা এবং অনাত্মা সম্পর্কে অজ্ঞানতা বা মিথ্যাজ্ঞানবশত কামনা বাসনার উদ্ভব হয়। সত্য বা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞানতা বা মিথ্যজ্ঞানের নিবৃত্তি ঘটে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সত্য বা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা আত্মায় নব পুদগলের অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং পূর্বসঞ্চিত পুদগলের অপসারণ সম্ভব। তাই জৈনগণ মুক্তি লাভের জন্য সম্যক জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। তাঁদের মতে, সম্যক জ্ঞান ব্যতীত মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। এ সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য প্রয়োজন সম্যক দর্শন। সম্যক দর্শন হলো সম্যক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস। জৈন মতে মুক্তি লাভের জন্য সম্যক জ্ঞান ও সম্যক দর্শনের যেমন প্রয়োজন তেমনি সম্যক চরিত্রের প্রয়োজন। এ সম্যক চরিত্র দ্বারা আত্মায় নব পুদগলের অনুপ্রবেশের পদ বন্ধ হয় এবং প্রাক্তন কর্ম পুদগলের ক্রমশ বিনাশ সাধিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্যক জ্ঞান, সম্যক দর্শন এবং সম্যক চরিত্রকে ত্রিরত্ন বলা হয়েছে। মুক্তি লাভের জন্য এ ত্রিরত্নেরই প্রয়োজন এদের কোন একটির দ্বারা মুক্তি লাভ সম্ভব নয় ।