Download Our App

জাবারিয়া সম্প্রদায় কারা? তাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।

অথবা, জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।
অথবা, মুসলিম দর্শনে জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে যা জানা লেখ।
অথবা, জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রথম হিজরি শতাব্দীর শেষের দিকে ইসলামে বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তাগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। মহানবীর জীবদ্দশায় মুসলমানেরা একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। কিন্তু তাঁর তিরোধানের পর মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শের উদ্ভব ঘটে এবং জনগণ কয়েকটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে জাবারিয়া সম্প্রদায় অন্যতম।
জাবারিয়া সম্প্রদায় : আরবি ‘জবর’ শব্দ থেকেই জাবারিয়া শব্দটি এসেছে। এর অর্থ বাধ্যতা, অদৃষ্ট বা নিয়তি। এ সম্প্রদায়ের মতে, মানুষের ইচ্ছা বা কর্মের স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতায় অস্বীকৃতি এবং আল্লাহর স্বেচ্ছাচারে বিশ্বাস থেকেই জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মানুষ সম্পূর্ণরূপে অদৃষ্ট বা নিয়তির অধীন। নিয়তি বা অদৃষ্টের কাছে মানুষ সম্পূর্ণরূপে অসহায়। আল্লাহ্ মানুষের অদষ্টে বা ভাগ্যে যা রাখেন তাই হয়। সৎ-অসৎ সমস্ত কাজই মানুষ আল্লাহর ইচ্ছাতেই করে। তাই জাবারিয়াদের মতে, মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী করা যায় না। মুসলিম দর্শনে এ সম্প্রদায় অদৃষ্টবাদী দার্শনিক সম্প্রদায় নামে পরিচিত। অদৃষ্টবাদী এ জাবারিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জাহান- বিন সাফওয়ান (মৃত্যু ৭৪৫ খ্রি:)। এ মতবাদ উমাইয়া শাসন আমলে বেশ প্রসার লাভ করে। সাফওয়ানের মতে, আল্লাহ্

সর্বশক্তিমান, তাই মানুষের কোন ক্ষমতা নেই।
জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : প্রাক ইসলামি যুগে আরবদের অনেকে অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী.ছিল। ইসলামি যুগে তাদের অনেকে আল্লাহর ইচ্ছা অনিচ্ছা সংক্রান্ত আয়াতগুলো দলিল হিসেবে গ্রহণ করে এবং অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী। জাবারিয়া সম্প্রদায়কে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: গোঁড়া বা চরমপন্থী জাবারিয়া ও মধ্যমপন্থী জাবারিয়া।
চরমপন্থী জাবারিয়াদের মতে, কোন অর্থেই মানুষ কিছু করে বা মানুষের কার্যশক্তি আছে বলে স্বীকার করে না। মধ্যমপন্থী জাবারিয়াদের মতে, মানুষের শক্তি আছে বলে স্বীকার করে, তবে সেই শক্তি কার্যের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না।.পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা আল বাকারার ২৮৪ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “কাইয়াডা ফেরু লেমাইইয়াশা ওয়া ইউয়াজ্জেবু মাই হয়াশা ওয়াল্লাহু আলা কুল্লো শাইয়ে কাদীর” অর্থাৎ, তিনি যাকে খুশি ক্ষমা করেন এবং যাকে খুশি শাস্তি দেন। কারণ তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সূরা আল ইমরানের ২৬নং আয়াতে তিনি (আল্লাহ্) বলেন, “ইয়াহদি মান ইয়াশা” অর্থাৎ তিনি যাকে ইচ্ছা সুপথে পরিচালনা করেন। আবার সূরা বাকারার ২৭২ নং আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “ওয়াখালাকা কুল্লে শাইয়েন ফাকাদ্দারাহা তাকদীরান” অর্থাৎ, তিনি (আল্লাহ্) প্রত্যেক জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর (ভাগ্য) নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। জাহম ইবন ‘সাফওয়ান’ আবু মুহরিজ ছিলেন জাকারিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান প্রবক্তা। ধর্মতত্ত্ববিধ হিসেবে তিনি কিছুটা স্বাধীন মত পোষণ করতেন। তার নামানুসারে তার অনুসারীদের জাহমিয়াও বলা হতো। এই দলটি ৫ম হিজরী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল। শিয়া ও খারিজি মতবাদ প্রসার লাভ করার পর জাকারিয়া মতবাদ দানা বাধতে শুরু করে। উমাইয়া, শাসনামলে শিয়া ও খারিজিরা উমাইয়া শাসকদের অস্বীকার করতে শুরু করলে জাহম ইবন সাফওয়ান (মৃত্যু ৭৪৫ খ্রি:) এর নেতৃত্বে
জাবারিয়া মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। এ সময়ে জাকারিয়াগণ অদৃষ্টবাদের ব্যাপারে একই মতাবলম্বী থাকলেও ছোটখাটো ব্যাপারে তারা জাহমিয়া, নাজারিয়া ও জাবারিয়া এ তিনটি প্রধান দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাবারিয়া চিন্তাবিদগণ কুরআনের সে সমস্ত আয়াতই উল্লেখ করেছেন যে আয়াতগুলো আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের কথা ব্যক্ত হয়েছে। সুতরাং জাবারিয়া সম্প্রদায়ের গুরুত্ব
দর্শনে অনস্বীকার্য।