অথবা, জাবারিয়া সম্প্রদায় বলতে কী বুঝ?
অথবা, জাবারিয়া সম্প্রদায় বলতে কাদের বুঝানো হয়।
অথবা, মুসলিম দর্শনে জাবারিয়া সম্প্রদায়ের পরিচয় দাও।
উত্তরা৷ ভূমিকা : মুসলমানরা ধর্মীয় বিধিসমূহ পালনে এতই আগ্রহী ছিলেন যে অন্য কোন বিষয় ভাবার অবকাশ থাকে না। ধর্মের বিধি নিষেধের তাৎপর্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে কোনরূপ মতদ্বৈততা থাকলেও সেদিকে তাঁরা ভুক্ষেপ করতেন না। ধর্মীয় ব্যাপারে তারা ছিল অটল। বিভিন্ন জাতি ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা কুরআন ও হাদিস সম্পর্কে নিজ
নিজ ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে কিছু সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। এই সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে জাবারিয়া সম্প্রদায় অন্যতম।
জাবারিয়া সম্প্রদায় : আরবি ‘জবর’ শব্দ থেকেই জাবারিয়া শব্দটি এসেছে। এর অর্থ বাধ্যতা, অদৃষ্ট বা নিয়তি। এ সম্প্রদায়ের মতে, মানুষের ইচ্ছা বা কর্মের স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীন অস্বীকৃতি এবং আল্লাহর স্বেচ্ছাচারে বিশ্বাস থেকেই জাবারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মানুষ সম্পূর্ণরূপে অদৃষ্টের কাছে মানুষ সম্পূর্ণরূপে অসহায়। আল্লাহ
মানুষের অদৃষ্ট বা ভাগ্যে যা রাখেন তাই হয়। সৎ অসৎ সমস্ত কাজই মানুষ আল্লাহর ইচ্ছাতেই করে। তাই জাবারিয়াদের মতে,
মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী করা যায় না। মুসলিম দর্শনে এ সম্প্রদায় অদৃষ্টবাদী সম্প্রদায় নামে পরিচিত। অদৃষ্টবাদী এ জাবারিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জাহান বিন সাফওয়ান (মৃত্যু ৭৪৫ খ্রি:)। এ মতবাদ উমাইয়া শাসন আমলে বেশ প্রসার লাভ করে। সাফওয়ানের মতে, আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান, তাই মানুষের কোন ক্ষমতা নেই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাবারিয়া চিন্তাবিদরা কুরআনের সে সমস্ত আয়াতের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন যে আয়াতগুলিতে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিষয় ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের যে সমস্ত আয়াতে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে জাবারিয়া চিন্তাবিদরা সে সকল আয়াতের প্রতি কোনরূপ গুরুত্ব আরোপ করেন নি।