উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ শিশু জাতির ভবিষ্যৎ। অথচ বাংলাদেশের শিশুদের সার্বিক অবস্থার দিকে দৃষ্টি রাখলে একটি হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠে। বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিশু মৃত্যুর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও অপুষ্টি, স্বাস্থ্যহীনতা এবং আশ্রয়হীনতাসহ নানা রকমের সমস্যায় জর্জরিত আমাদের দেশের শিশুরা। পৃথিবীর সকল শিশুকে
তাদের প্রাপ্ত অধিকার এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন
করে। শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশ শিশু অদিকার সনদ বাস্ত বায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করে।
→ জাতীয় শিশুনীতির আলোকে শিশু শিক্ষাসমূহ ঃ নিচে জাতীয় শিশু নীতির আলোকে শিশু শিক্ষা সম্পর্কে যে সকল
বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো :
১. বর্তমানে প্রচলিত প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে শিশুর প্রারম্ভিক শৈশব
বিকাশ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা হবে।
২. প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে করা হবে। অর্থনৈতিক, নৃতাত্ত্বিক ও অন্যান্য কারণে পশ্চাৎপদ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণসহ উৎসাহ প্রদানকারী বিশেষ সুবিধাদি প্রধান করা হবে।
৩. সকল শিশুকে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার আওতায় আনা এবং ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৪. মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে শিশুরা যেন তাদের চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে মান সম্পন্ন যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে।
৫. আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।
৬. শিক্ষার সর্বস্তরের সাংবিধানিক নিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটানোর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৭. মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৮. শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সকল ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা এবং শাস্তির ফলস্বরূপ কোন শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের যেন শারীরিক ও মানসিক কোনো ক্ষতি না হয় সে লক্ষ্যে শিশুবান্ধব শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রবর্তন করা হবে।
৯. দেশের প্রচলিত বিভিন্ন ধারার শিক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে যাতে সকল ধারার শিক্ষার্থীরা সমানভাবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভ এবং দেশের উন্নয়ন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।
১০. শিশুদের শিক্ষার মান ও উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিশুবান্ধব উন্নত পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয় শিশুনীতির দ্বারা বাংলাদেশের দারিদ্র্য, অসহায়, শ্রমজীবী শিশুদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং কিভাবে শিশু শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা সে বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।