উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ একটি জাতির উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মানবতার বিকাশ জনমুখী উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদান নীতিবান ও কুসংস্কারমুক্ত জাতি গঠনে অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়া, সচেতনাবোধ জাগ্রত করা সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানব সম্পদের উন্নয়ন, শিক্ষার বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ প্রদান প্রভৃতি সকল দিকের নির্দেশনা শিক্ষানীতিতে রয়েছে।
→ জাতীয় জীবনে শিক্ষানীতির গুরুত্ব ঃ নিম্নে আমাদের জাতীয় জীবনে শিক্ষানীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো :
১. শিক্ষার হার বৃদ্ধি : শিক্ষানীতির অন্যতম দিক হলো দেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা, অর্থাৎ নিরক্ষরমুক্ত করা। এজন্য রয়েছে সরকারের শিক্ষা মানবীয় গুণাবলি বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি।
২. মানবীয় গুণাবলির বিকাশ : শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সাধন করা, শিক্ষা নীতিকে এমনভাবেই সাজানো হয়েছে যে, যাতে এদেশের নাগরিকদের মানবীয় গুণাবলির জাগ্রত হয়।
৩. সচেতনতা সৃষ্টি ঃ শিক্ষানীতির আরেকটি অন্যতম দিক হলো শিক্ষার্থীদেরকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রতি সচেতন করে তোলা। এর ফলে ব্যক্তি জীবনেও শিক্ষার্থী সচেতন হয়ে উঠবে।
৪. সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা ঃ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষাকে প্রয়োগধর্মী ও উৎপাদনমুখী হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিমূলক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশে সহায়তা প্রদান করা।
৫. বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করা : বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সবার জন্য শিক্ষালাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা। এর ফলে সকল শ্রেণির ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে।
৬. গণতান্ত্রিক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : গণতান্ত্রিক চেতনা বোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীলতা হওয়া এবং জীবনমুখী, বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা দান শিক্ষানীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৭. প্রতিভার বিকাশ ঃ মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে
শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতি স্তরে মানসম্পন্ন যোগ্যতা অর্জন করে প্রতিভার সাক্ষর রাখতে পারে এ লক্ষ্যে শিক্ষানীতি প্রণীত হয়।
৮. ভিজিটাল বাংলাদেশ : জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর (ভিজিটাল) বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি (ICT) এবং এর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানে শিক্ষানীতি-২০১০ বদ্ধপরিকর।
৯. বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব ঃ শিক্ষানীতির একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো শ্রমের প্রতি শিক্ষার্থীদেরকে শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী করে তোলা এবং শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়ার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষার দক্ষতা অর্জনে সমর্থ করা।
১০. অন্যান্য ঃ শিক্ষানীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দক্ষ-জ্ঞানশক্তি সৃষ্টি করা গবেষণার পরিবেশ গড়ে তোলা, উন্নত চরিত্র গঠন, সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশে সাধন, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা প্রভৃতি ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে শিক্ষানীতির গুরুত্ব অপরিসীম কেননা এ নীতি জাতীয় জীবনে সুদূরপ্রসারী ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায় ।