অথবা, জাতিবর্ণ ব্যবস্থার সুবিধাসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, জাতিবর্ণ ব্যবস্থার সুবিধাসমূহ কী কী? লেখ।
অথবা, জাতিবর্ণ ব্যবস্থার সুবিধাসমূহ নিজের ভাষায় উপস্থাপন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : জাতিবর্ণ হলো একটি বদ্ধগোষ্ঠী। যখনই কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে উত্তরাধিকারসূত্রের বিচার করা হয়, তখনই তাকে নির্দিষ্ট জাত বা জাতিবর্ণে অভিহিত করা হয়। বস্তুত জাতিবর্ণ ব্যবস্থা হচ্ছে সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি সুকঠোর ব্যবস্থা।
জাতিবর্ণ ব্যবস্থার সুবিধাসমূহ : নিম্নে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. জাতিবর্ণ প্রথা একটি জনগোষ্ঠীকে এক ধরনের স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় এবং একই সাথে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে এর একটা সম্পর্ক নির্ণয় করে এবং সমাজে একটা উঁচুনিচু ধরনের কাঠামো তৈরি করে।
বিশাল ভারতীয় সমাজ অনেক সংস্কৃতির এক মিলন ক্ষেত্র। এরই মধ্যে উপজাতি বর্ণের স্বকীয়তা বজায় রাখতে Caste system এর বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
২. নিচু জাতিবর্ণ উঁচু-জাতি-বর্ণের সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড অনুসরণের মাধ্যমে Sanskritization প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করেছে। এ প্রক্রিয়া দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের উপজাতীয়দের মধ্যেও বিস্তার লাভ করেছে। এতে হিন্দুধর্মীয় মূল্যবোধ বিস্তার লাভ করেছে।
৩.জাতিবর্ণ প্রথাকে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
৪. হিন্দুসমাজের কাঠামো ও গড়নে জাতিবর্ণ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
৫.জাতিবর্ণের একটি বিশেষ গুণ এই যে, এটা সমাজে শ্রম বিভাজনের মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ কাজে এক একটি উপজাতি বর্ণকে বিশেষ দক্ষ করে তোলে।
৬.জাতিবর্ণ রক্তের বিশুদ্ধতার রক্ষাও সহায়ক। কেননা অন্তর্বিবাহ হচ্ছে জাতি-বর্ণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৭.শুচিতা ও শৃঙ্খলাপূর্ণ একটি ঐক্য বন্ধনেরও জন্ম দেয়।
৮.জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ভারতীয় সমাজকে এমন এক অনন্য সাধারণ ঐক্য প্রদান করেছে, যার ফল এ ঐক্য হিন্দু সভ্যতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জাতিবর্ণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে যে উঁচুনিচু ভেদাভেদের পার্থক্য সৃষ্টি করে তা মূলত একটি জনগোষ্ঠীকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় যা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।