অথবা, জনসমষ্টির মানদণ্ড বর্ণনা কর।
অথবা, জনসমষ্টি বিষয়বস্তু কী?
অথবা, জনসমষ্টি প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ‘Survival is the fittest’ এ নীতির বিপরীত দর্শন থেকেই সমষ্টি বা সমষ্টি সংগঠন প্রত্যয়টির উদ্ভব। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে সকল মানুষের যেমন বেঁচে থাকা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে তেমনি দুর্বলেরও সমাজে বেঁচে থাকা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে। সমাজের সকল লোক ও সকল দলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সমাজকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়। মূলত এ দর্শন থেকেই সমষ্টি বা সম্প্রদায় প্রত্যয়ের উদ্ভব।
জনসমষ্টির বৈশিষ্ট্য : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী প্রদত্ত জনসমষ্টি সম্পর্কিত বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল :
১. ভৌগোলিক সীমারেখা : জনসমষ্টিতে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা থাকবে যাতে ঐ এলাকার জনগণ পৃথক জনসমষ্টি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে।
২. জনসমষ্টি গোষ্ঠী : জনসমষ্টিতে অবশ্যই সমস্বার্থ প্রণোদিত একদল লোকের একত্রে বসবাস থাকতে হবে। জনসমষ্টি গঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নির্দিষ্ট পরিমাণ জনগোষ্ঠী।
৩. সাধারণ স্বার্থ : নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসরত জনসমষ্টির মাঝে যথেষ্ট পরিমাণে সাধারণ স্বার্থবোধ থাকতে হবে, যা তাদের মধ্যে উন্নয়ন ও সহমর্মিতার আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং এ স্বার্থকে কেন্দ্র করে তাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিকে একটা সাদৃশ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
৪. আঞ্চলিক স্বজাত্যবোধ : গোষ্ঠী স্বজাত্য ও চেতনাবোধ ছাড়া জনসমষ্টি গঠিত হতে পারে না। একই এলাকায় বসবাসকারী লোকের মাঝে এমন একটি সাধারণ বন্ধন গড়ে উঠবে, যা তাদের মাঝে আঞ্চলিক স্বজাত্যবোধ জাগ্রত করবে। এ স্বজাতি চেতনা তাদের মধ্যে সমষ্টি চেতনার বিকাশ ঘটাবে। তাই জনসমষ্টির মাঝে আঞ্চলিক স্বজাত্যবোধ একান্ত প্রয়োজন।
৫. সামাজিক প্রতিষ্ঠান : জনসমষ্টির জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য জনসমষ্টিতে কতকগুলো সামাজিক প্রতিষ্ঠান
থাকবে। যেগুলো জনসমষ্টির জনগণ যৌথভাবে পরিচালনা করবে এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন সময় জনসমষ্টি কাঠামোতে এসেছে পরিবর্তন। ফলে যাযাবর জীবনের অবসান হয়ে গ্রামীণ সংঘবদ্ধ জনসমষ্টির বিকাশ ঘটেছে এবং কালক্রমে নগরের প্রসার ঘটায় শহর জনসমষ্টির উদ্ভব ঘটে। বর্তমানে আমাদের সমাজে মূলত শহর এবং গ্রামীণ এ
দু’ধরনের জনসমষ্টির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।