অথবা, জনপদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার জনপদগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। বর্তমান বাংলাদেশ বলতে আমরা যে ভূখণ্ডকে বুঝি প্রাচীন যুগে এসব অঞ্চলের বিশেষ কোনো নাম ছিল না। তখন ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও খণ্ডে বিভক্ত ছিল। রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে এ অঞ্চলগুলোর সীমানাও বহুবার হ্রাসবৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও অঞ্চলগুলো জনপদ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
জনপদ শব্দের বিশ্লেষণ : ‘জনপদ’ প্রাচীন বাংলার ব্যবহৃত একটি শব্দ। শাব্দিক অর্থে ‘জন’ মানে মানুষ আর ‘পদ’ মানে ‘পা’। কিন্তু এখানে জনপদ বলতে মানুষের পা না বুঝিয়ে কোন অঞ্চলকে বুঝায়, সাধারণভাবে জনপদ বলতে কোনো জনগোষ্ঠীর নামে পরিচিত বিশেষ অঞ্চলকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, প্রাচীন বাংলার যে অঞ্চলগুলো ভূ-প্রকৃতি ও নদীর স্রোত দ্বারা নির্ধারিত হয়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল সেই অঞ্চলগুলোকে জনপদ বলা হয়।
জনপদ : প্রাচীন কালের বাংলা একত্রিত কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল না। অধিক বিস্তৃতি ছিল এ বাংলার সীমানা। উত্তরে হিমালয় হতে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সমতল ভূমি নিয়ে প্রাচীন বাংলা গঠিত ছিল। এ কারণে এর বিভিন্ন অংশের নামও ছিল আলাদা। বাংলার বিভিন্ন অংশ তখন বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ়, গৌড়, সমতট, হরিকেল প্রভৃতি বিভিন্ন নামের জনপদ বা রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। এজন্য প্রাচীন বাংলা ভিন্ন ভিন্ন নামে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত ছিল। বাংলার বিভিন্ন অংশে অবস্থিত প্রাচীন জনপদগুলোর সীমা ও বিস্তৃতি সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কারণ বিভিন্ন সময়ে এসব জনপদের সীমানা বৃদ্ধি বা হ্রাস পেয়েছে। এর বিভিন্ন অংশের নামও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর বঙ্গে পুণ্ড্র ও বরেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গে রাঢ় ও তাম্রলিপি, দক্ষিণ বঙ্গে সমতট ও হরিকেল এবং পূর্ববঙ্গে ছিল বঙ্গাল। এছাড়া উত্তর পশ্চিমবঙ্গের কতকগুলো অঞ্চল গৌড় নামে পরিচিত ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে জনপদ ছিল। বাংলার জনপদগুলো বাংলার ভূপ্রকৃতির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এসব জনপদ প্রাচীন কালে
বেশ উন্নত ও সমৃদ্ধিশীল ছিল।