জগৎ সম্পর্কে আল্লামা ইকবালের বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, আল্লামা ইকবালের জগৎ সম্পর্কিত মতবাদ কী?
অথবা, আল্লামা ইকবালের দৃষ্টিতে জগৎ কিরূপ?
অথবা, আল্লামা ইকবালের জগৎ সম্পর্কিত মতবাদ সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, আল্লামা ইকবালের জগৎ সম্পর্কিত মতবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে আল্লামা ইকবাল বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। প্রাচ্যের আধ্যাত্মিকতা ও পাশ্চাত্যের বস্তুবাদকে সমন্বয় করে ইসলামের সাথে সংগতিপূর্ণ দর্শন রচনা করেছেন। তাঁর দর্শন চিন্তা ইসলামি ঐতিহ্য পুনর্জাগরণের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তিনি যেসব
বিষয়ে আলোচনা করেছেন জগৎ সম্পর্কিত আলোচনা তার মধ্যে অন্যতম।
ইকবালের জগৎ সম্পর্কিত মতবাদ : ইকবাল বলেন, আমরা যে জগতে বাস করি তা নিশ্চল বা বদ্ধ নয়; গতিশীল। জগৎ সর্বদা অভিব্যক্তির পথে একটি অগ্রসরমান প্রক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য জগতে নিয়ত প্রয়াস চলছে। জগতে নতুন নতুন সৃষ্টি এ অভিব্যক্তিকেই প্রকাশ করে। বাস্তবতা সম্পর্কে বা জগৎ সম্পর্কে তাঁর এ বক্তব্য
কুরআনের সাথে সংগতিপূর্ণ। কুরআনের জ্ঞান অনুসারে জগৎ বর্ধনশীল বিকাশমান। জগৎ স্থির নয় আবার পূর্ণও নয়। মানুষ এ জগতের প্রাণশক্তি ও প্রধান কর্তা। পরমসত্তার অফুরন্ত সম্ভাবনা বিকাশ প্রক্রিয়ায় মানুষ আল্লাহর সহকর্মী। জগৎ অধ্যায় বা বাস্তবতা বর্জিত নয়। মানুষ এ জগতকে জানতে পারে। তাই একই সাথে বিষয় ও বিষয়ির উপস্থিতি স্বীকার করতে হয়। তাই আমাদেরকে অবশ্যই বাহ্য জগৎকে স্বীকার করতে হবে। কেননা বিষয়ী খুদির বাইরে বাহ্য জগতের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। অহমের বাইরে অস্তিত্বশীল এ সত্তাকে ইকবাল বহির্জগৎ হিসেবে স্বীকার করে নেন।
ইকবালের মতে, জড়ের প্রকৃত স্বরূপকে জানার জন্য চিন্তন বা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণ কোনটাই যথার্থ নয়। জড়ের প্রকৃত রূপ শুধু
সজ্ঞার সাহায্যেই উপলব্ধি করা যায়। ইকবালের জগৎ সম্পর্কিত তত্ত্বে, একদিকে জগৎকে পরিবর্তনশীল ও বাস্তব হিসেবে
বর্ণনা করা হয়েছে, অপরদিকে জগৎকে সজ্ঞার মাধ্যমে জানা যায় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর এরূপ ব্যাখ্যা কুরআন ও
বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, আল্লামা ইকবাল জগৎ বলতে পরিবর্তনশীল বা গতিশীল জড় জগৎকে নির্দেশ করেছেন যা ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া বা ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে একদিকে পরিপূর্ণ করছে, অপরদিকে, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাঁর মতে, সজ্ঞার মাধ্যমে এ বস্তুজগৎকে জানা যায়। এ
জগতের পিছনে রয়েছেন মহান আল্লাহ। তাঁর জগৎ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা মুসলিম দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছে।