জগতের সৃষ্টিকর্তা ও কারণ সম্পর্কে গাজালির যুক্তিসমূহ কী কী?

অথবা, দার্শনিকদের যুক্তি খণ্ডনে আল গাজালির যুক্তি কী?
অথবা, জগতের সৃষ্টিকর্তা ও কারণ সম্পর্কে গাজালির অভিমত উল্লেখ কর।
অথবা, দার্শনিকদের যুক্তি আল গাজালি কিভাবে খণ্ডন করেন?
অথবা, জগতের সৃষ্টিকর্তা ও কারণ সম্পর্কে গাজালির যুক্তিসমূহ সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
আল গাজালি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ। জ্ঞানের গভীরতা এবং চিন্তার মৌলিকতায় তিনি মুসলিম চিন্তাবিদদের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান লাভ করে আছেন। মুসলিম ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তাধারার
ইতিহাসে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষর রেখেছেন। তিনি জগতের সৃষ্টিকর্তা ও কারণ সম্পর্কে দার্শনিকদের যুক্তি খণ্ডন করে নিজস্ব
যুক্তি দাঁড় করিয়াছেন।
গাজালির যুক্তি : যেসব দার্শনিকরা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন না সেসব দার্শনিক এবং বস্তুবাদী দার্শনিকদের বিরুদ্ধে গাজালি বলেন যে, যারা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও কারণকে অস্বীকার করেন তারা কারণ পরম্পরায় বিশ্বাস করেন। তারা সবকিছুর পিছনে বস্তুকেই স্বীকার করেন, যার কোন কারণ নেই।
যারা আস্তিক তারা জগতের সৃষ্টিকর্তা বা পরম করুণাময় আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। যারা জগতের অনাদিত্বে বিশ্বাস করেন। আল গাজালি তাদের যুক্তি খণ্ডনের চেষ্টা করেন। আল গাজালি দার্শনিকদের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি দেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. জড় বা বস্তুসমূহ সৃষ্টি হওয়া যারা বিশ্বাস করেন না, তাদের পক্ষে পরম করুণাময় আল্লাহকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।
২. অনাদি ও অনন্ত যা কিছুই থাকুক না কেন তার কোন কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং জগৎ অনাদি ও অনন্ত এর.কোন কারণ নেই।
৩. দার্শনিকদের ‘সম্ভব’ ও ‘অবশ্যম্ভাবী’ কথা দুটিকে গাজালি স্বীকার করেন নি। গাজালি এ শব্দ দুটিকে দার্শনিকদের ধোঁকাবাজি বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দার্শনিকরা কখনো প্রমাণ করতে পারেন নি যে, জগৎ অবশ্যম্ভাবী।
৪. গাজালি দেখাতে চান যে, বিশেষ বিশেষ অংশ বা ঘটনা দ্বারা সমগ্র গঠিত হয়। এ সমগ্রের পিছনে কোন কিছু দেখা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, জগতের সৃষ্টিকর্তা ও কারণ সম্পর্কে আল গাজালি যে যুক্তি দিয়েছেন, তা মুসলিম দর্শনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, নাস্তিক ছাড়া কেউই জগতের সৃষ্টিকর্তা ও কারণকে অস্বীকার করতে পারে না। সুতরাং এ জগতের সৃষ্টিকর্তা ও বিধানকর্তা একমাত্র আল্লাহ।