উৎস : বক্ষ্যমাণ অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘হুযুর কেবলা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে সংগৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এমদাদ নিজে পীরের মুরিদ হওয়ার জন্য সুফি সাহেবের কাছে কামেল পীরের সন্ধান জানতে চাইলে সুফি সাহেব নিজের মাহাত্ম্য প্রচারে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : এমদাদ যখন ধর্মে একনিষ্ঠা স্থাপন করতে ব্যর্থ হলো তখন সে পীর সাহেবের স্থানীয় এক খলিফার শরণাপন্ন হলো। এমদাদ স্থানীয় কংগ্রেস ও খেলাফত কমিটির সেক্রেটারি ছিল। সেখানে প্রত্যহ সকালে বিকালে অনেক মওলানা মওলবীর সমাবেশ ঘটত। এদের একজনের সুফি বলে খ্যাতি ছিল। সে পীর সাহেবের স্থানীয় খলিফা ছিল এবং অনেক রাত পর্যন্ত ‘এল্হু’ ‘এল্হু’ করতো। এছাড়া সে মেয়েলোকের উপর জিনের আসর হলে জিন ছাড়াতে পারত। এই সুফি সাহেবের কাছেই এমদাদ তার প্রাণের বেদনা জানাল। সুফি সাহেব এমদাদের দুর্বলতা বুঝতে পেরে তাকে অনুসরণ করার জন্য বলল। এমনি এক পরিস্থিতিতে সে এমদাদকে জিজ্ঞেস করল, সে এখনো কারো মুরিদ হয়েছে কি না। জবাবে এমদাদ না বলাতে সে এমন ভাব করল যেন সে রোগ নির্ণয় করে ফেলেছে। সে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল ‘গোড়াতেই গলৎ’। কেননা পীর না ধরে কেউ রুহানিয়ৎ হাসেল কতে পারে না। তার যুক্তির পক্ষে সে হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে কামেল ও মোকাম্মেল, সালেক ও মজযুব পীরের দামন না ধরে কেউ যমিরের রওশনী ও রুহের তরব্বী হাসেল করতে পারে না। সুফি সাহেবের মুখে হাদীসের এ সুস্পষ্ট নির্দেশের কথা শুনে এমদাদ নিতান্ত ঘাবড়ে গেল। সে সুফি সাহেবকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে তার সন্ধানে কোন কামেল পীর আছে কি না জানতে চাইল । চতুর সুফি সাহেব নিজের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য তখন গর্বের সাথে বলে, জওহরের তালাসে যারা জীবন কাটিয়েছে তারা ছাড়া কে জহওহরের খবর দিতে পারে।
মন্তব্য : নিজেকে প্রচারের এ হীন চেষ্টার মধ্য দিয়ে সুফি সাহেবের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এখানে।