চীনা পর্যটক মা-হুয়ান সম্পর্কে কি জান লেখ ।

উত্তর : ভূমিকা : পরিব্রাজক জেং হি এর ভারত মহাসাগরে অভিযাত্রার সফরসঙ্গী হন প্রধান কর্মকর্তার মধ্যে মা-হুয়ান ছিলেন অন্যতম। বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সময়ে তিনি বাংলা ভ্রমণ করেন। তার বর্ণনায় বাংলার আর্থ-সামাজিক অনেক বিষয় উঠে এসেছে। বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তার বর্ণনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
→ মা-হুয়ান পরিচিতি : বাংলার ইতিহাসে মা-হুয়ানের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে মা-হুয়ানের বর্ণনা প্রদান করা হলো-
১. জন্ম
২. বাসস্থান
৩. বংশ পরিচয়
৪. শিক্ষালাভ
৫. বাংলা সম্পর্কে বর্ণন
৬. মৃত্যু
১. জন্ম : মা-হুয়ান নিজের বয়স সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা দেননি। তবে ধারণা করা হয় তিনি ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পদবি থেকে জানা যায় যে তিনি মুসলমান ছিলেন।
২. বাসস্থান : মা-হুয়ান চীনের উপকূলীয় প্রদেশ জেজিয়াং এর শাওজিং জেলার গুইজি নগরের অধিবাসী ছিলেন। মা- হুয়ানের সৌজন্য পদবি ছিল জংদাউ। তার নামের পূর্বে ব্যবহৃত ‘মা’ শব্দটি চীনে মুহম্মদ (স.) এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হত।
৩. বংশ পরিচয় : মা-হুয়ানের দাদা এবং বাবা সম্ভবত মোঙ্গল অথবা আরব বংশোদ্ভূত ছিল। তারা উভয়েই হজ্জ পালন করেছিলেন। মিং বাহিনী যখন ইউনান শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
অভিযান করে তখন তিনি ধৃত হন, তাকে খোজার পরিণত করা হয় এবং হারেমের প্রহরী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
৪. শিক্ষালাভ: তার লেখার প্রকাশভঙ্গি প্রকাশ করে যে তিনি উপযুক্ত শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি কবিতাও লিখতে পারতেন। তবে তা খুব সাধারণ শৈলীর। যুবক বয়সে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় শিক্ষালাভ করেন। সম্ভবত তিনি একজন দক্ষ শিক্ষকের অধীনে শিক্ষা গ্রহণ করেন, ফলে তিনি একজন দক্ষ দোভাষীতে পরিণত হন।
৫. বাংলা সম্পর্কে বর্ণনা : মা-হুয়ান বাংলা পরিভ্রমণ করে বাংলা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত বিবরণ লেখেন। তিনি বাংলার ভূমিরূপ ভ্রমণ পথ এবং বিভিন্ন স্থানের বিবরণ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। তিনি এখানকার বস্ত্রশিল্প, নানা রকমের মাদক দ্রব্য, শস্য, বিবাহ ও শেষকৃত্যানুষ্ঠান, ভাষা, পোশাক, মুদ্রা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি সম্পর্কে লিখেছিলেন। অনেকেই মনে করেন তিনি বাংলায় থাকাকালে বাংলা ভাষাও কিছুটা শিখেছিলেন ।
৬. মৃত্যু : মা-হুয়ানের মৃত্যু সম্পর্কে তেমন কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে তার গ্রন্থ প্রকাশিত হবার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে ধারণা করা হয়।
উপসংহার : মা-হুয়ান খুব সাধারণ মনের মানুষ ছিলেন। তিনি যে-কোনো ধরনের সহিংসতাকে ঘৃণা করতেন। তার বিবরণে একজন ভ্রমণ বৃত্তান্ত লেখকের মাঝে একজন নব- জিজ্ঞাসা লালনকারী মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়। মা-হুয়ানের বিবরণ বিস্তারিত হওয়ার কারণে পরবর্তীতে অনেক ইতিহাস গ্রন্থই তার গ্রন্থের উপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/