অথবা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল বা কুফলগুলো আলোচনা কর।
অথবা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতের ভূমি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনয়নকারী যে পদক্ষেপটি ভারতের তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ ঘোষিত আইন দ্বারা বলবৎ করেন; তারই নাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। নিম্নে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করা হলো : সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১. জমিদারের আয় বৃদ্ধি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষিকার্য সম্প্রসারিত হয় এবং এর ফলে জমিদারগণের আয় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য নির্ধারিত হওয়ার ফলে জমিদারগণ জমিতে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ এবং অতিরিক্ত শ্রমদান করে এমনকি জঙ্গলাকীর্ণ ও পতিত জমিও চাষাবাদের আওতায় আনতেন।
২. বাজেট প্রণয়নে সুবিধা : জমিদারগণ কর্তৃক দেয় রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কোম্পানি তার আয় সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়ে বাজেট প্রণয়ন এবং বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুবিধাপ্রাপ্ত হয় ।
৩. ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন : জমিদারগণ তাদের স্বস্ব গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপনে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ফলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছিল।
৪. সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন : এরূপে সৃষ্ট বিত্তবান জমিদার শ্রেণি প্রজাগণের মঙ্গলার্থে পুষ্করিণী খনন, বিদ্যালয়, চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপন এবং দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সময়ে প্রজাদেরকে নানাবিধ সাহায্য প্রদান করে ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতেন।
৫. ব্রিটিশ সরকারের জনপ্রিয়তা ও স্থায়িত্ব লাভ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্রিটিশ সরকারকে জনপ্রিয়তা ও স্থায়িত্ব প্রদান করে। এই ব্যবস্থায় ভারতীয় প্রদেশগুলো সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে অগ্রসর হয়েছিল। অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১. জরিপ না করে রাজস্ব নির্ধারণ : এই ব্যবস্থায় জমিদারের অধীনে জমি জরিপ না করে কী পরিমাণ নিষ্কর ভূমি ছিল এবং কী পরিমাণ ভূমি পশুচারণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে সকল বিষয়ে কোন প্রকার খোঁজ খবর না নিয়ে রাজস্ব নির্ধারিত হতো বলে রাজস্বের হার হতো অত্যধিক বেশি।
২. রায়তের উপর জমিদারের অত্যাচার : রায়তের জমির উপর কোন প্রকার অধিকার স্বীকৃত না থাকায় জমিদারগণ অতি সামান্য কারণে এমনকি বিনা কারণেও রায়তিদেরকে জমি হতে উচ্ছেদ করতে দ্বিধাবোধ করতেন না।
৩. জমির উপর চাপ বৃদ্ধি : জমির মালিকানা চিরস্থায়ী হবার ফলে সকলেই যে কোনো উপায়ে জমি ক্রয় করতে কিংবা নানা অজুহাতে অধিকার করতে উদগ্রীব হয়ে উঠলে জমির উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
৪. ইংরেজ সরকারের ক্ষতি : এ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও রাজস্বের হার বৃদ্ধি করার কোন অবকাশ ছিল না। ফলে ব্রিটিশ সরকার বর্ধিত মূল্যজনিত লাভের অংশ হতে বঞ্চিত হয়ে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
৫. জমির উন্নয়ন সাধন : জমির উন্নতি সাধনে সচেষ্ট না হলেও জমি জমিদারগণের হস্তচ্যুত হবার কোনো আশঙ্কা না থাকায় জমিদারগণ জমির উন্নতি সাধনে সচেষ্ট ছিল না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সরকার, জমিদার, কৃষক এবং সমাজ কাঠামোর উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কিছু জমিদার ছাড়া অধিকাংশ জমিদারের জন্য সৌভাগ্য এবং কৃষকদের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে।