উৎস : আলোচ্য অংশটুকু উচ্ছল প্রাণশক্তির প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : অত্যাচার নির্যাতনের হাতিয়ারকে কবি আনন্দের পরশমণি দিয়ে মণিকাঞ্চনে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রদত্ত চরণে।
বিশ্লেষণ : পরশমণির স্পর্শেই সবকিছু মূল্যবান মণিকাঞ্চনে পরিণত হয়। মানুষের হৃদয় পরশমণির উৎস। মানুষের অন্তরের কোমলতা, প্রেম দিয়েই অন্যের অন্তর জয় করা যায়। এমনকি বিশ্বজয়ও করা যায়। যে মানুষ শিশুর প্রাণের উচ্ছল আনন্দ ধরে রাখতে পারে, সে আনন্দের পরশমণি দিয়ে লৌহদৃঢ় হৃদয়কেও মণিকাঞ্চনে পরিণত করতে পারে। ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় রাজশক্তিবিরোধীগণজাগরণমূলক লেখা প্রকাশিত হওয়ায় কবি রাজরোষে পড়েন। রাজদ্রোহের অপরাধে তাঁকে রাজকারাগারে বন্দী করা হয়। কিন্তু তিনি ভয় পাননি বা হতাশ হননি, বরং ধৈর্য ও সংযমের সাথে এ অবস্থার মোকাবিলা করেছেন। কেননা, তিনি জানেন সত্য ন্যায়ের আশ্রয়ে থেকেই তিনি সবকিছু করেছেন। আর তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন সত্য সুন্দর ভগবান। তিনি তাঁকে শক্তি দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, অভয় দিয়েছেন। চিরশিশু প্রাণের উচ্ছল আনন্দের পরশমণি দিয়ে নির্যাতিত লোহাকে তিনি মণিকাঞ্চনে পরিণত করেছেন।
মন্তব্য : কবির হৃদয় বিদ্রোহের জন্য যেমন উৎসর্গীকৃত ছিল, তেমনি কারাগারের নির্যাতনকে সহজভাবে আনন্দের সাথে মেনে নেয়ার জন্যও প্রস্তুতি ছিল। শিশুর সরলতা এবং প্রাণচাঞ্চল্যই তাঁকে দিয়েছে সে শক্তি।