অথবা, চাহিদা বিধির ব্যতিক্রমসহ আলোচনা কর।
উত্তর: প্রারম্ভিক কথা : কোন দ্রব্যের চাহিদার সাথে দামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দাম ও চাহিদার মধ্যে যে আপেক্ষিক বা ক্রিয়াগত সম্পর্ক বিদ্যমান তাকে চাহিদা বিধি বলে। সাধারণত কোন দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদা হ্রাস পায় এবং দাম কমলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। দাম ও চাহিদার মধ্যকার এ ক্রিয়াগত সম্পর্ক যে বিধির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ভাকে চাহিদা বিধি বলে।
চাহিলা বিধিঃ প্রত্যেক দ্রব্যের চাহিদা এর দামের উপর নির্ভরশীল। চাহিদা বিধি বলতে দামের সাথে চাহিদার এ নির্ভরশীলতাকেই বোঝায়। অন্যান্য অবস্থা (ক্রেতার আয়, রুচি, অন্যান্য দ্রব্যের দাম প্রভৃতি) অপরিবর্তিত থেকে দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে এবং দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। দ্রব্যের দাম এবং চাহিদার পরিমাণের ক্রিয়াগত সম্পর্ককেই চাহিদা বিধি বলে।।
অধ্যাপক মার্শাল বলেন, “অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোন দ্রব্যের দাম কমলে তার চাহিদা বাড়বে আর দাম কমলে চাহিদা কমবে। এটাই হলো চাহিদা বিধি।”
সুচির সাহায্যে চাহিদা বিধি ব্যাখ্যাঃ
দ্রব্যের দাম(p) | চাহিদার পরিমান(Qd) |
৬ টাকা | |
৪ টাকা | |
২ |
উপরের চাহিদা সূচিতে দেখা যাচ্ছে যে, দ্রব্যের দাম কমার ফলে চাহিদা বাড়ছে। যেমন- দ্রব্যের দাম যখন ৬ টাকা। তখন চাহিদা ১একক, দাম কমে যথাক্রমে ৪ ও ২ টাকা হলে চাহিদা বেড়ে হয় ২ একক ও ৩ একক। এভাবে দাম কমতে থাকলে চাহিদাও ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বিপরীত ক্রমে দাম বাড়তে থাকলে চাহিদাও ক্রমশ কমতে থাকে।
চিত্রের সাহায্যে চাহিদা বিষির ব্যাখ্যাঃ OX অক্ষে চাহিদার পরিমাণ এবং OY অক্ষে দ্রব্যের দাম পরিমাপ করা হলো। দাম যখন OP চাহিদার পরিমাণ তখন OA, দাম যখন OP, চাহিদার পরিমাণ তখন OB এবং দাম যখন OP, চাহিদার পরিমাণ তখন OC। দাম এবং চাহিদার পরিমাণ নির্দেশক a. b এবং বিন্দু সংযোগ DD’ রেখাটি হল চাহিলা রেখা। এ চাহিদা রেখাটি ডানদিকে নিম্নগামী। অর্থাৎ এর ঢাল ঋণাত্মাক বলে এটি দাম এবং চাহিদার বিপরীত সম্পর্ক প্রকাশ করে।
চাহিদা বিধির সমালোচনা: অধ্যাপক মার্শালের তাত্ত্বিক বক্তব্য হলো চাহিদা রেখা ডান দিকে নিম্নগামী অর্থাৎ দামের সাথে চাহিদার বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। দাম বাড়লে চাহিদা বাড়ে এবং নাম কমলে চাহিদা কমে। তবে এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। নিম্নে সেগুলো ব্যাখ্যা করা হল।
১. রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন: ভোক্তার রুটি ও অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটলে চাহিদা বিধি কার্যকর হবে না। যেমন- কেউ যদি ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দেয় তাহলে সিগারেটের দাম কমে গেলেও তার কাছে এর চাহিদা বাড়বে না।
২. গিফেন দ্রব্যঃ ১৮৪০ সালে নিকৃষ্ট পর্যায়ভুক্ত কিছু পণ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে স্যার রবার্ট গিফেন লক্ষ্য করেন যে, এ, সকল দ্রব্যের দামের বৃদ্ধিতে চাহিদাও বৃদ্ধি পায় এবং দামের হ্রাস পেলে চাহিদাও হ্রাস পায়। স্যার রবার্ট গিফেন সর্ব প্রথম এসব দ্রব্যের অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের উলেখ করে বলেন এগুলোকে গিফেন দ্রব্য বলা হয়। গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম দেখা যায়।
২. আয়ের পরিবর্তন: পণ্যদ্রব্যের দাম পরিবর্তনের হার অপেক্ষা যদি ক্রেতার আয় পরিবর্তনের হার অধিক হয়, অর্থাৎ ক্রেতার প্রকৃত আয়ের পরিবর্তনে চাহিদা বিধির সাধারণ সূত্র কার্যকর নাও হতে পারে। যেমন- আয় হ্রাস পেলে কোন দ্রব্যের দাম কমলেও ক্রেতা কম পরিমাণে তা ক্রয় করে।
৪. অবস্থাগত কারণঃ অবস্থাগত কারণেও চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম হতে পারে। কোন এলাকায় মহামারী কলেরা দেখা দিলে, সে সময় সেখানে মাছের দাম হ্রাস পেলেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না।
৫. বিকল্প দ্রব্যের দাম: কোন দ্রব্যের দাম পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি এর বিকল্প দ্রব্যগুলোর দামের পরিবর্তন একই হারে ঘটে তাহলে চাহিদা বিধিটি কার্যকর হবে না।
৬. বিকল্প দ্রব্য নেইঃ যে সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের কোন বিকল্প দ্রব্য নেই তাদের ক্ষেত্রেও চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না। যেমন- লবণ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং এর কোন বিকল্প দ্রব্য নেই। কাজেই লবণের দাম বাড়লেও চাহিদা কমে না।
৭. ভবিষ্যৎ দামঃ কোন কারণে ক্রেতা বা ভোক্তারা যদি মনে করে ভবিষ্যতে দ্রব্যটির দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ক্রেতারা ঐ দ্রব্যটি অধিক পরিমাণে ক্রয় করবে।
৮. ভোক্তার অজ্ঞতা: কোন ভোক্তা যদি দ্রব্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এর গুণাগুন বিচার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে দাম বৃদ্ধি পেলেও দ্রব্যটিকে অধিক মূল্যবান মনে করে বেশি পরিমাণে ক্রয় করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, চাহিদা বিধির উপরোক্ত ব্যতিক্রম থাকা সত্ত্বেও এর কার্যকারিতা অস্বীকার করা না। সীমিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া সকল ক্ষেত্রেই এই বিধির কার্যকারিতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।