চাহিদা বলতে কি বুঝ? বাংলাদেশের যুবকদের চাহিদাগুলো আলোচনা কর।

অথবা, চাহিদা কাকে বলে? যুবসমাজের চাহিদাগুলো বিস্তারিত আলোচনা কর।
অথবা, চাহিদার সংজ্ঞা দাও। যুবদের চাহিদা কী কী বিস্তারিত বর্ণনা কর।
অথবা, যুবকদের চাহিদাগুলো উল্লেখপূর্বক চাহিদার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, চাহিদার সংজ্ঞা দাও। একজন যুবকের কী কী? চাহিদা থাকতে পারে বলে তুমি মনে কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এছাড়াও মানুষ সামাজিক জীব বলে সমাজে বসবাস করে।সমাজে বসবাস ও জীবন নির্বাহ করতে হলেও নানাবিধ জিনিসের প্রয়োজন পড়ে।এসব প্রয়োজনগুলোকেই চাহিদা বলে। সব বয়সের সব মানুষের চাহিদা একরকম নয়। বয়সভেদে চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যুবকরাও মানুষ। যুবকদের জীবনধারণের জন্য তাই নানা রকম জিনিসের দরকার হয়। এসব জিনিসকেই যুবকদের চাহিদা বলে। বাংলাদেশের জনগণের এক বিরাট অংশ যুবক। তাই বাংলাদেশের যুবকদের নানাবিধ চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের যুবকদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হচ্ছে না।
চাহিদা : আগেই বলা হয়েছে মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ই হল চাহিদা। অর্থাৎ জীবন ধারণ করতে মানুষ যার অভাব বোধ করে তাই চাহিদা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : চাহিদা সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে তাঁদের মতামত ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল :
Social Work Dictinary তে চাহিদার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “Social work dictionary define needs as physical, psychological,economical, cultural and social requirements for survival, wellbeing and fulfillment.” অর্থাৎ, সমাজকর্ম অভিধান চাহিদাকে সংজ্ঞায়িত করেছে দৈহিক, মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক উপাদানসমূহ হিসেবে যা বেঁচে থাকার জন্য পূরণ করা অত্যাবশ্যক।
সুতরাং উপরের আলোচনা হতে একথা বলা যায় যে, চাহিদা হল এমন কিছু সামাজিক, আবেগীয়, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ যা মানবজীবনে একান্তভাবে পূরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে যুবকদের চাহিদা : বাংলাদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। এ ১৪ কোটি লোক সংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হল যুবক। যুবসমাজ হচ্ছে কর্মঠ, পরিশ্রমী ও প্রাণচঞ্চল। তাই যে কোন দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে যুবশক্তির উপর। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের যুবসমাজ তাদের চাহিদা থেকে বঞ্চিত। ফলে তারা তাদের সঠিক
ভূমিকা পালন করতে পারছে না। নিম্নে বাংলাদেশের যুবসমাজের চাহিদাগুলো আলোচনা করা হল :
১. কর্মসংস্থানের চাহিদা : বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ হচ্ছে যুবক। আর যুবকদের বিরাট অংশ আজ বেকার। কিন্তু যুবসমাজ বেকার থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে না। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লক্ষ শিক্ষিত বেকার রয়েছে।বেকারত্বের এ সংখ্যাই যুবকদের কর্মসংস্থানের চাহিদার কথা বলে দেয়। তাই বাংলাদেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থানের চাহিদা রয়েছে।
২. বাসস্থানের চাহিদা : বাংলাদেশে বাসস্থানের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। এ সমস্যা হতে যুবসমাজ মুক্ত নয়। তাই বাংলাদেশের যুবকদের বাসস্থানের চাহিদা রয়েছে।
৩. খাদ্যের চাহিদা : যুবক বয়স হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত বয়স। এ সময় শরীরে প্রচুর শক্তি ও উদ্যম থাকে। তাই পরিশ্রম বেশি করা যায়। কিন্তু খাদ্য না খেলে পরিশ্রম করা যায় না। বাংলাদেশের যুবকরা উপযুক্ত খাদ্য পায় না। তাই তারা সঠিকভাবে পরিশ্রমও করতে পারে না।
৪. উপযুক্ত শিক্ষা লাভের চাহিদা : বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক যুবক আজ উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। কর্মের সাথে অসংগতিপূর্ণ ও মান্দাতার আমলের শিক্ষা তাদের বেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই যুগোপযোগী,কর্মমুখী ও জীবনমুখী শিক্ষা লাভের চাহিদা বাংলাদেশের যুবসমাজের রয়েছে।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা লাভের চাহিদা : বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই বললেই চলে। কিন্তু যুবকরা।বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময় ও অক্ষমতার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রাখে।
৬. স্বকর্মসংস্থানের চাহিদা : বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক যুবক আজ বেকারত্বের অভিশাপে অভিশপ্ত।তাদের কর্মসংস্থানের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ তেমন নেই। কিন্তু যুবকরা কোথাও হতে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে।স্বকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। সে চাহিদা তাদের থাকলেও সুযোগের অভাব রয়েছে।
৭. অনুকূল সামাজিক পরিবেশ প্রাপ্তির চাহিদা : বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ যুবকদের অনুকূলে নয়।বাংলাদেশের সমাজে বিশৃঙ্খলা, সমস্যা ও অন্যান্য অসুবিধা রয়েছে যা যুবকদের বিকাশের অন্তরায়। তাই বাংলাদেশের যুবকদের অনুকূল সামাজিক পরিবেশ প্রাপ্তির চাহিদা রয়েছে।
৮. পোশাকের চাহিদা : যুবকরা একটু ফ্যাশনেবল হয়ে থাকে। তাই তাদের পোশাক আশাক হয় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের যুবসমাজ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও যুগোপযোগী পোশাক হতে বেশির ভাগই বঞ্চিত হচ্ছে। তাই একথা বলা যায় বাংলাদেশের যুবসমাজের পোশাকের চাহিদা রয়েছে।
৯. আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির চাহিদা : বাংলাদেশের যুবকদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির চাহিদা রয়েছে। কেননা যুবকরাও মানুষ।তাদের মান মর্যাদা রয়েছে। তাদের মান মর্যাদাকে আরো উন্নত করার সুযোগ তারা চাইতেই পারে। তাই বলা যায়
বাংলাদেশের যুবকদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির চাহিদা রয়েছে।
১০. স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির চাহিদা : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোন কিছুই ভালো লাগে না।তাই বাংলাদেশের যুবকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির চাহিদা রয়েছে। উপযুক্ত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল, ডাক্তার,
নার্স ও ওষুধ পত্রের চাহিদাও রয়েছে তাদের।
১১. দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের চাহিদা : বাংলাদেশের যুবকদের দক্ষতা কম। তাছাড়া প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। দক্ষতার অভাব ও প্রশিক্ষণের অভাবে তারা চাকরি পায় না। তাই যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, প্রাপ্তির চাহিদা রয়েছে যাতে তারা কর্মসংস্থান লাভ করতে পারে।
১২. চিত্তবিনোদনের চাহিদা : চিত্তবিনোদন মানুষের মৌল মানবিক প্রয়োজন।যুবকদেরও চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। চিত্তবিনোদনের অভাবে যুবকদের জীবন একঘেয়ে হতে পারে। তাই সুস্থ চিত্তবিনোদনের চাহিদা রয়েছে যুবকদের।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা হতে একথা বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল ও সীমিত সম্পদের দেশ। অন্যদিকে, এদেশে শিক্ষিত অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যুবসমাজ রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ।সরকারের পক্ষে যুবসমাজের সব চাহিদা মিটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই যুবকদের সমস্যা সমাধানের জন্য বা তাদের
প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।