অথবা, চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা : সাধারণত আমরা মনে করি চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা উক্ত দ্রব্যের দামের উপর নির্ভর করে। কিন্তু বাস্তবে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা শুধু দামের উপর নির্ভর করে না আরও অনেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নিচে আলোচিত হলো। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
১. দ্রব্যের প্রকৃতিঃ সাধারণত অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। কারণ এসব দ্রব্যের দামের পরিবর্তনে চাহিদার তেমন পরিবর্তন হয় না। আবার, বিলাস জাত দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক। বিলাস জাতও আরামপ্রদ দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে চাহিদা অধিক বৃদ্ধি পায়।
২. বিকল্প দ্রব্যের উপস্থিতি: আলোচ্য দ্রব্যের বিকল্প দ্রব্য যদি বাজারে না থাকে, তবে সে দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক, আর যদি বিকল্প দ্রব্য বাজারে থাকে তবে সে দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হবে। যেমন- লবণ। যেহেতু লবণের বিকল্প দ্রব্য নেই, তাই দাম বাড়লেও এর চাহিদা তেমন হ্রাস পাবে না। তাই লবণের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক।
২. আয়ের পরিমাণঃ সমাজে যারা ধনী, তাদের নিকট দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। কারণ দামের হ্রাস বৃদ্ধি ধনীদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু, যারা নিম্ন আয়ের লোক তাদের নিকট দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।
৪. ভোক্তার অভ্যাস: কোন দ্রব্য ভোগ করতে করতে ক্রেতা বা ভোক্তা আসক্ত বা নেসাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারেন । সে দ্রব্যের ক্ষেত্রে ঐ সকল ভোক্তার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক যেমন- পান-সিগারেটের প্রতি আসক্ত ক্রেতার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক।
৫. বিকল্প দ্রব্যঃ যে দ্রব্যের বিকল্প দ্রব্য যত বেশি তার স্থিতিস্থাপকতা ও তত বেশি। কারণ এসকল দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে বিভিন্নমুখী চাহিদা ও ব্যবহার বেড়ে যায়।
৬. পরিপূরক দ্রব্যঃ পরিপূরক দ্রব্যের ক্ষেত্রে একটির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে অপর দ্রব্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এ ধরনের দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।
৭. একাধিক ব্যবহারযোগ্য দ্রব্য: যেসব দ্রব্যের ব্যবহার বিভিন্নমুখী, সেসব দ্রব্যের দাম সামান্য হ্রাস পেলে চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পায়। যেমন- বিদ্যুৎ, কয়লা, কাগজ, দুধ প্রভৃতি। বিদ্যুৎ কলকারখানায়, গৃহে, অফিস-আদালতে সর্বত্রই ব্যবহার হয়। দাম হ্রাস পেলে এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়। এ সকল দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।
৮. স্থগিত ব্যবহারঃ যে সব দ্রব্যের ব্যবহার সাময়িক, অল্প সময়ের জন্য যে সব দ্রব্যের ভোগ স্থগিত রাখা যায়, ঐ সকল দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।
৯. দ্রব্যের দাম: দ্রব্যের দাম খুব বেশি বা খুব কম হলে ঐ সকল দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। যেমন- বিলাসদ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে ধনীদের তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। আবার, সুই, আলপিন, লবণ এসব দ্রব্যের দাম কম এবং চাহিদা এক্ষেত্রে অস্থিতিস্থাপক। এছাড়া মোট আয়ের অতিসামান্য অংশ এসব দ্রব্য ক্রয়ে ব্যয় হয়।
১০. সময়ের ব্যবধান: দীর্ঘকালে যেহেতু যে কোন দ্রব্যের উৎপাদন বা বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন করা যায় সেহেতু স্বল্পকালে কোন দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপকতা হলেও দীর্ঘকালে সে দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক।
১১. আয়ের শতকরা খরচঃ কোন দ্রব্যের জন্য যদি আয়ের সামান্য অংশ খরচ করা হয় তবে ঐ দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হবে।
১২. যুক্ত চাহিদা: যুক্তভাবে যে সকল দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, সে সকল দ্রব্যের চাহিদা সাধারণত অস্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- মোটর গাড়ির দাম হ্রাস না পেয়ে জ্বালানির দাম হ্রাস পেলে ও গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পায় না।। উপসংহার। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ ধারণা লাভ করা যায় যে অনেক বিষয়ের উপর চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করে। স্থান, কাল, পাত্র ও পরিবেশের পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন রূপ হতে পারে। তাই চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা একটি আপেক্ষিক বিষয়।