চার্বাক মতে মূল্য বলতে কী বুঝ?

অথবা, চার্বাক মতে মূল্য কী?
অথবা, চার্বাক মতে মূল্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক মতে সুখই জীবনের পুরুষার্থ বা পরম কল্যাণ। ইহজীবনের সুখ পরিত্যাগ করা মূর্খের কাজ। চার্বাকগণ বলেন, অতীত চলে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কেবল বর্তমানই মানুষের আয়ত্তে আছে। তাই যেভাবেই হোক বর্তমান জীবনে মানুষ যতবেশি সুখ ভোগ করতে পারে তাদের তা করা উচিত।
চার্বাক মতের, মূল্য : আপত দৃষ্টিতে মনে হয় দর্শন হিসেবে চার্বাক মতের বিশেষ কোন মূল্য নেই। এ মত সর্বাংশে নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে একেবারে মূল্যহীনও নয় এবং তেমন নিন্দনীয়ও নয়। তাই এ নাস্তিক দর্শন দর্শনের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। চার্বাক দর্শন কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও অর্থহীন প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। এ বিদ্রোহ ভারতবর্ষে নির্বিচার দর্শনের ভিত্তি উৎপাটিত করে সবিচার দর্শনের ভিত্তি রচনা করেছে। দর্শনে যে অবিচারিত তত্ত্ব ও মতের স্থান নাই চার্বাক দর্শন তা প্রতিপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। স্বার্থান্বেষী ব্রাহ্মণদের ষড়যন্ত্রকে চার্বাক দর্শন কঠোর আঘাত হেনেছে। চার্বাক দর্শন চরম প্রত্যক্ষবাদী ও সংশয়বাদী দর্শন। চার্বাকদের সংশয়বাদ ভারতের অন্যান্য দার্শনিকদের সতর্ক করে দিয়েছিল। ফলে তারা তাদের মতবাদকে কেবল বিশ্বাস নির্ভর না করে অধিকতর যুক্তি নির্ভর করতে সচেষ্ট হন।
প্রাচীন তত্ত্ব সম্পর্কে চার্বাকগণ যে তীব্র সমালোচনা করেছেন, সে সমালোচনার জন্যই ভারতীয় ষড়দর্শনের বর্তমান রূপ সম্ভব হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাকগণ ভারতীয় দর্শনকে পরিপুষ্ট করেছে। তাদের মতে, ইন্দ্রিয় সুখ মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য এবং ভোগ বিলাসের জীবনই আদর্শ জীবন। তাঁদের মতে, যে কাজ অধিক ইন্দ্রিয় সুখ
উৎপাদনকারী সে কাজ ভালো, আর যে কাজ দুঃখ উৎপাদনকারী সে কাজ মন্দ।