চার্বাক দর্শন কী?

অথবা, চার্বাক দর্শন বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাক দর্শনের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, চার্বাক দর্শন কাকে বলে?
অথবা, চার্বাক দর্শন সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে চার্বাক দর্শন এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। চার্বাক দর্শন জড়বাদী দর্শন। সমস্যা চার্বাক দর্শন তার জ্ঞানতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রমাণিক গ্রন্থ নেই। কিন্তু বেদ, রামায়ণ, মহাভারত এবং বৌদ্ধ সাহিত্যের বিভিন্ন স্থানে চার্বাক দর্শনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই চার্বাক দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন।
চার্বাক দর্শন : চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণ্য গ্রন্থ পাওয়া যায় নি বলে চার্বাক শব্দের মূল অর্থকে কেন্দ্র করে নানা মতবেদের সৃষ্টি হয়েছে। কারো কারো মতে, পুরাকালে চার্বাক নামে কোন ঋষি ছিল। তার নামানুসারেই এ দর্শনের নাম হয়েছে চার্বাক দর্শন। আবার কারো মতে, চার্বাক কথাটির অর্থ চারু + বাক বা মধুর কথা। তবে চার্বাক শব্দের অর্থ যাহোক না কেন, মূলত চার্বাক দর্শন বলতে জড়বাদী নাস্তিক দর্শনকেই বুঝায়। চার্বাক দর্শন জড়বাদী দর্শন। তারা কেবলমাত্র জড়ের অস্তিত্বকেই স্বীকার করে। তারা আত্মার পৃথক সত্তা স্বীকার করেন না। তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বেও বিশ্বাস করে না। চার্বাক দর্শন প্রত্যক্ষণকেই জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, শাস্ত্র বা শব্দ বা অনুমান আমাদেরকে কোন প্রকৃত সত্যের সন্ধান দিতে পারে না। চার্বাক দর্শন আত্মদর্শন ও আত্মসুখবাদের প্রচারক। এ দর্শনের মতে ইন্দ্রিয় সুখই জীবনের একমাত্র কাম্য বস্তু। তাঁদের মতে, যতদিন বাঁচ সুখেই বাঁচ, ঋণ করে হলেও ঘি খাও। চার্বাক দর্শন সুখ ভোগকে মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য বলে নির্ধারণ করেছে। এ দর্শন সাধারণ লোকের চিন্তা ও ভাবধারাকে ব্যক্ত করেছে বলে একে লোকায়ত দর্শনও বলা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাক দর্শন ভারতীয় দর্শনের পরিমণ্ডলে এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। চার্বাক দর্শনই একমাত্র দর্শন যা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীন চিন্তাধারার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।