চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক দর্শন বিশুদ্ধ জড়বাদী দর্শন। চার্বাক দর্শনের মতে, অচেতন জড়পদার্থই একমাত্র সত্তা। চার্বাক দর্শন নিছক জড়বাদী বলে এটা আত্মা এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণিক গ্রন্থ পাওয়া যায় নি। তবুও এ দর্শন যে অতি প্রাচীন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব : চার্বাকদের মতে, যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায় হলো প্রমাণ। চার্বাক দর্শনের মতে, প্রত্যক্ষণই একমাত্র প্রমাণ। অর্থাৎ ‘প্রত্যক্ষই’ যথার্থ জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায়। যে বস্তুকে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায় না, সে বস্তুর অস্তিত্ব আছে, একথা বলা অর্থহীন। প্রত্যক্ষ দুই প্রকার। যথা: ১. বাহ্য প্রত্যক্ষ ও ২. মানস প্রত্যক্ষ।
১. বাহ্য প্রত্যক্ষ : চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক এ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বহির্বস্তুর যে সাক্ষাৎ জ্ঞান পাই তাই বাহ্য প্রত্যক্ষ।
২. মানস প্রত্যক্ষ : মনরূপ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে সুখদুঃখ প্রভৃতি মানসিক অবস্থার যে সাক্ষাৎ লাভ করা হয় তাকেই মানস প্রত্যক্ষ বলা হয়। চার্বাক দর্শন অনুমান এবং শব্দকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করে নি। ফলে এদের বিরুদ্ধে চার্বাকরা নিম্নলিখিত যুক্তি উপস্থাপন করেন :
ক. অনুমান প্রমাণের বিরুদ্ধে যুক্তি : চার্বাকরা বলেছেন, দু’টি বস্তু পাশাপাশি অবস্থান করলেই তাদের মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধ আছে একথা প্রমাণিত হয় না। যেমন- ধোয়া ও আগুন পাশাপাশি থাকলে তাদের প্রত্যক্ষ করা চলে, কিন্তু তাদের সম্বন্ধকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সুতরাং এ সম্বন্ধ সন্দেহাত্মক। কোন নিয়ত সম্বন্ধ যে সার্বিকভাবে সত্য হবে তার কোন
নিশ্চয়তা নেই, চার্বাকদের মতে, ব্যাপ্তিজ্ঞান কোন অনুমান হতে পারে না। অনুমানলব্ধ জ্ঞান সুস্পষ্ট নয়। অনুমান নিতে যদি অস্পষ্ট হয় তবে সে কি করে আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান দিবে? সুতরাং অনুমান যথার্থ জ্ঞান দিতে পারে না।
খ. শব্দ প্রমাণের বিরুদ্ধে যুক্তি : ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়কে অনেকে শব্দ বা আপ্তবাক্যকে একটি যথার্থ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু চার্বাকদের মতে, শব্দ নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নয়। কারণ শব্দ হলো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বচন মাত্র। কোন ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য কি না তা অনুমান করা হয় তার চরিত্র হতে। অনুমান যেখানে নির্ভরযোগ্য নয়, সেখানে অনুমাননির্ভর শব্দকেও যথার্থ প্রমাণরূপে গ্রহণ করা যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাকদের মতবাদের যথেষ্ট ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এ মতবাদকে কোন মতেই গুরুত্বহীন বলা যায় না। কেননা সবকিছুরই ভালোমন্দ দুটি দিক থাকে। আর সাধারণত সমালোচকরা মন্দ দিকটাই সমালোচনা করে থাকেন। সুতরাং চার্বাক দর্শন” জড়বাদী হলেও ভারতীয় দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে তার অবদান অস্বীকার করা যায় না।