চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব অনুসারে প্রত্যক্ষণই কি একমাত্র প্রমাণ?

অথবা, ‘প্ৰত্যক্ষণই জ্ঞানের উপায়’- চার্বাকদের উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, প্রত্যক্ষই জ্ঞানের একমাত্র উৎস- চার্বাক দর্শন অনুযায়ী ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব প্রত্যক্ষণের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের মতে, প্রত্যক্ষণই একমাত্র প্রমাণ। প্রত্যক্ষণে যা পাওয়া যায়, তা-ই স্বীকার করা যায়; যা পাওয়া যায় না তার অস্তিত্ব স্বীকার করা অযৌক্তিক ও অযথার্থ। যে বস্তু কোন কালে কোনভাবে প্রত্যমানগোচর হয় না তা কেবল কল্পনামাত্র।
প্রত্যক্ষণই জ্ঞানের একমাত্র উপায় : চার্বাকদের মতে প্রত্যক্ষণই জ্ঞানের উপায়। তাদের মতে, বস্তুর অস্তিত্ব নিশ্চিত হয় প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে। তাই তারা জ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুমান ও শব্দের যথার্থতা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন।চার্বাকদের মতে, প্রত্যক্ষণ হলো মন এবং পঞ্চেন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে প্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট সরাসরি অভিজ্ঞতা। বস্তু সম্পর্কে এই অভিজ্ঞতা অপরোক্ষ এবং এতে কোন মাধ্যম প্রয়োজন হয় না। এরূপ সরাসরি পাওয়া যায় বলে তা সংশয় বা ভ্রান্তিশূন্য এবং সঠিক বা সম্যক জ্ঞান । চার্বাকদের মতে, প্রত্যক্ষণ দু’ প্রকার। যথা : বাহ্য ও মানস। পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রাপ্ত জ্ঞানকে বাহ্য প্রত্যক্ষণ বলে। মনের সাহায্যে আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি মানসিক অবস্থার সাক্ষাৎ পাওয়াকে মানস প্রত্যক্ষণ বলে। আবার মানস প্রত্যক্ষণ বাহ্য প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভরশীল। কেননা বাহ্য প্রত্যক্ষণের উপর ভিত্তি করেই মনের অনুভূতিগুলো বিন্যস্ত হয়। চার্বাকদের মতে, বাহ্য ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে জ্ঞান পাওয়া যায়, তাই সঠিক ও অভ্রান্ত। যা কিছু প্রত্যক্ষণযোগ্য তাই সত্য যা প্রত্যক্ষণের বাইরে তা সংশায়িত। প্রত্যক্ষণ বলতে চার্বাকরা বহিরেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে বুঝে থাকেন। অনুমান প্রভৃতি অন্যান্য মানসিক প্রমাণ থেকে যে জ্ঞান পাওয়া যায় তা সবসময় সংশয়মুক্ত হয় না। তাই প্রত্যক্ষণ প্রমাণই একমাত্র নির্ভরযোগ্য। যেমন – পাহাড়ে ধোঁয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য না করলে আগুনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না। অতএব প্রত্যক্ষণই যে জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম তা নিয়ে চার্বাকদের মনে কোন দ্বিমত নেই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাকদের মতে একমাত্র প্রত্যক্ষণই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সঠিক ও নির্ভুল জ্ঞান দিতে পারে। তবে সমালোচকদের মতে প্রত্যক্ষণই যদি সঠিক জ্ঞান দেয় তবে কেন আমাদের রজ্জুতে সর্পভ্রম হয়। এ সম্পর্কে চার্বাকরা বলেন, ইন্দ্রিয়ের দোষ, আলোর সমস্যা ইত্যাদির জন্য প্রত্যক্ষণে ভুল হতে পারে। কিন্তু নির্দোষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে প্রত্যক্ষণ হয় নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য। বিষয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের সরাসরি সংযোগ না হলে প্রত্যক্ষণ হয় না। অর্থাৎ চার্বাকদের মতে বিশুদ্ধ প্রত্যক্ষণ কখনই ভুল হয় না।