চার্বাকরা মোক্ষলাভ বলতে কী বুঝেন?

অথবা, মোক্ষলাভ বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাক মোক্ষলাভ কী?
অথবা, মোক্ষলাভ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাকরা বলেছেন, যা কিছু আমাদের আনন্দ দেয় তাই ভালো; আর যা আমাদের কষ্ট দেয় তাই মন্দ। তাদের মতে, বর্তমান সুখই পরম সুখ। সুখকে তারা স্থূল অর্থে গ্রহণ করেছেন। ঋণ করে হলেও ঘি খাও এবং যতদিন বাঁচ সুখেই বাঁচ এটাই হলো চার্বাকদের Ethics এর মূলকথা।
মোক্ষলাভ : ভারতীয় দার্শনিকদের অনেকেই মোক্ষলাভকে জীবনের পরম পুরুষার্থ বলেছেন। তাদের মতে, মোক্ষলাভ হচ্ছে দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি। কেউ কেউ বলেছেন, কেবল মৃত্যুর পরই মোক্ষলাভ সম্ভব। আবার কেউ কেউ বলেছেন, জীবিত অবস্থায়ও মোক্ষলাভ সম্ভব। কিন্তু চার্বাকরা এ দুটি মতের, কোনটি গ্রহণ করেন নি। কেননা চার্বাকরা বলেছেন, মোক্ষ বলতে যদি দেহ থেকে আত্মার মুক্তিকে বুঝায়, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ অবাস্তব। কেননা দেহ ভিন্ন আত্মার কোন অস্তিত্ব নেই। তাই মৃত্যুর পর মোক্ষলাভ সম্ভব নয়। চার্বাকরা বলেছেন, জীবিত অবস্থায়ও মোক্ষলাভ সম্ভব নয়। কেননা মোক্ষ বলতে বুঝায় দুঃখের আত্যন্তিক বিনাশ, যেখানে দুঃখের কোন উপস্থিতি থাকবে না। তারা বলেছেন, বাস্তব জগতে কি আমরা কখনো এ ধরনের পরিবেশ পাই? তারা বলেছেন, সুখদুঃখ মিলেই মানুষের জীবন। মানুষ যতদিন বাঁচবে ততোদিন তাকে সুখদুঃখ ভোগ করতেই হবে। চেষ্টা করে সে কেবল দুঃখের কেবল সুখের পরিমাণ বাড়াতে পারে। কিন্তু দুঃখ থেকে পুরোপুরি নিবৃত্তি লাভ সম্ভব নয়। চার্বাকরা দেখান যে, মৃত্যুর পর কিংবা জীবিতাবস্থায় কোনভাবেই মোক্ষলাভ সম্ভব নয়। তাই মোক্ষলাভ জীবনের পরম পুরুষার্থ হতে পারে না। চার্বাকরা বলেছেন, সুখের সাথে দুঃখ বিজড়িত বলে সুখ ভোগের চেষ্টা হতে আমাদের বিরত থাকা উচিত নয়। মাছে কাঁটা থাকা সত্ত্বেও যেমন আমরা মাছ খাওয়া বন্ধ করি না, গোলাপ ফুলে কাঁটা থাকা সত্ত্বেও আমরা যেমন গোলাপ ফুল তোলা থেকে বিরত থাকি না, তেমনি সুখের সাথে দুঃখ বিজড়িত থাকলেও আমরা সুখ ভোগ থেকে বিরত থাকি না। চার্বাকদের মতে, এ সুখ ভোগই হচ্ছে জীবনের পরম পুরুষার্থ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাকদের মতে, অতীত চলে গেছে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কেবল বর্তমানই মানুষের আয়ত্তে আছে। তাই যেভাবেই হোক বর্তমান জীবনে মানুষ যতবেশি সুখ ভোগ করতে পারে তাদের তা করা উচিত। সুতরাং চার্বাকরা মোক্ষকে পরম কাম্যবস্তু বা পুরুষার্থ বলতে নারাজ।