অথবা, কী কারণে চাকমা সমাজে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে?
অথবা, চাকমা সমাজ কেন পরিবর্তন হচ্ছে?
উত্তর৷ ভূমিকা : পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার মোট আয়তন প্রায় ৫,৩০০ বর্গমাইল। এ বিস্তৃত এলাকায় বসবাসরত উপজাতির সংখ্যা অনেক। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। এখানে প্রায় ৩৯ হাজার চাকমা পরিবার বসবাস করে।
চাকমা সমাজের পরিবর্তন : চাকমা সমাজে পরিবর্তনের জন্য কয়েকটি বিশেষ উপাদান মুখ্যত দায়ী। এগুলো হলো :
৪.চাকমারা পূর্বে চাকমা অঞ্চল ছেড়ে সমতল এলাকায় এসে কোনো কাজকর্ম করতে চাইত না। শিক্ষা প্রসারের ফলে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মনে সাহস সঞ্চারিত হয়েছে। শিক্ষা প্রসারের ফলে চাকমা
সমাজে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকমা উৎপাদন কৌশলে এসেছে পরিবর্তন, জুম চাষের স্থলে অথবা জুম চাষের পাশাপাশি হালকৃষি গৃহীত হয়েছে এবং সরকারি উদ্যোগের ফলে উদ্যান চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চাকমা সমাজে আগে জমিতে মোটেই ব্যক্তিমালিকানা ছিল না। যার যেখানে যত খুশি জমি চাষ করতে পারতো। পাকিস্তান আমল থেকেই ধীরে ধীরে প্রথমে হালকৃষির জন্য উপযোগী সমতল জমিতে এবং জুম ও উদ্যান চাষের জন্য উপযোগী জমিতে ভূমি বন্দোবস্ত শুরু হয়। এর ফলে সমাজের ক্রমশ বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে থাকে । বাঙালিদের সংস্পর্শে আসার ফলে চাকমারা আরকানি ভাষার মধ্যে বাংলা শব্দ গ্রহণ করতে শুরু করে এবং ক্রমে তাদের ভাষায় এখন ৮০% এর অধিক বাংলা শব্দ গৃহীত হয়েছে। এর ফলে তাদের ভাষা বাংলা উপভাষায় পরিণত হয়েছে।
৫. পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে ১৯৬০ সালে যখন চাকমা অঞ্চলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় তখন থেকে চাকমারা তাদের ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বের স্থলে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থাপিত স্থানীয় সরকারি নেতৃত্বের প্রতি ক্রমশ বেশি আকৃষ্ট হতে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বহুবিধ কারণে চাকমা সমাজে পরিবর্তন এসেছে। চাকমারা অনেকক্ষেত্রে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনেক পেশা, ভাষা ইত্যাদি গ্রহণ করতে শুরু করেছে।