চলমান ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কী? চলমান ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের পরিধি আলোচনা কর।

অথবা, চলমান ব্যবহরিক প্রশিক্ষণ কাকে বলে? চলমান ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, চলমান ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, চলমান ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রমমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা :
শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে চলমান মাঠকর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি তা বাস্তবে প্রয়োগ করাকে বলা হয় চলমান মাঠকর্ম।এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সমাজকর্ম বিষয়ে জ্ঞান ও বুদ্ধির পূর্ণ বিকাশ ঘটে থাকে। চলমান মাঠকর্মের শিক্ষার্থী ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সাথে কাজ করার পর সম্পাদিত কেসগুলো তত্ত্বাবধায়কের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুত করে থাকে।
চলমান মাঠকর্ম : ছাত্র-ছাত্রীরা যখন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে এবং ঐ বিষয়ে সংস্থায় তাদের তাত্ত্বিক ও বাস্তব জ্ঞানকে কাজে লাগায় তখন তাকে চলমান মাঠকর্ম বলে। উদাহরণ স্বরূপ শিক্ষার্থীদের কোনো অপরাধ সংশোধন কোর্স সম্পন্ন করতে গেলে তাদের অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আবার কোনো মনস্তাত্ত্বিক কোর্স সম্পন্ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।এ ধরনের মাঠকর্মের সুবিধা হলো ছাত্রছাত্রীরা তাদের শ্রেণিক্ষকের জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে। এ কাজে সবাই মনোযোগী ও সক্রিয় হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সাধারণত উন্নত দেশে চলমান মাঠকর্ম প্রচলিত রয়েছে।
চলমান মাঠকর্মের পরিধি বা ক্ষেত্র : নিম্নে চলমান মাঠকর্মের কতিপয় ক্ষেত্র বর্ণনা করা হলো :
১. চিকিৎসা সমাজকর্ম/ হাসপাতাল সমাজসেবা : চলমান মাঠকর্মের অন্যতম ক্ষেত্র হলো চিকিৎসা সমাজকর্ম। হাসপাতাল সমাজসেবা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঠকর্মের ক্ষেত্র হিসেবে এখানে সংস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে সব বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যাবশ্যক সেগুলো হলো:
i. রোগীর মনোসামাজিক সমস্যা নির্ধারণ করা।
ii. ব্যক্তি সমাজকর্ম ও দল সমাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
iii. প্রতিবন্ধীত্ব ও অসুস্থতার জন্য পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
iv. একাধিক দলের সাথে কাজ করার আগ্রহ থাকা।
v. স্বাস্থ্য কর্মসূচি সম্পর্কে ধারণা থাকা ।
২. সমষ্টি উন্নয়ন : সমষ্টি উন্নয়ন মানে গ্রামীণ সমষ্টির উন্নয়ন। এক্ষেত্রে মাঠকর্মের আওতায় গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো এবং দলীয় গতিশীলতা অর্জন করার চেষ্টা করা হয়। এজন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যেমন- ঘটনা অনুধ্যান, গণযোগাযোগ, যোগাযোগ, নেতৃত্ব, অর্থ সংগ্রহ, প্রতিবেদন লিখন প্রভৃতি। এগুলো একজন উন্নয়ন মাঠকর্মীর জন্য অত্যাবশ্যক। সমষ্টি উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ ও পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপারে গ্রামীণ জনগণকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এজন্য শিক্ষানবিশ সমাজকর্মীকে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়।
৩. পরিবার ও শিশুকল্যাণ : পরিবার ও শিশুকল্যাণ আর একটি অন্যতম চলমান মাঠকর্মের ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণিকক্ষের অর্জিত জ্ঞানকে পরিবার ও শিশুকল্যাণে প্রয়োগ করে থাকে। মাঠকর্মে এর লক্ষ্যসমূহ হলো :
i. বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তোলা।
ii. সমাজকর্মের পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা।
iii. পরিবার ও শিশুদের কল্যাণের নিমিত্তে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তোলা।
৪. মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা: চলমান মাঠকর্মের একটি বিশেষ ক্ষেত্র হলো মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে মাঠকর্মের লক্ষ্যসমূহ হলো:
i. সমাজকর্মের পদ্ধতিসমূহ শিল্প ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরিবেশ তৈরি করা।
ii. শি ল্প সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা।
iii. শিক্ষার্থীদের শ্রম আইনের সাথে পরিচিতি করা।
iv. মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন করা।
v. মানব সম্পদের চাহিদা নির্ধারণ করা।
vi. মানব সম্পদ ব্যবহারে এর প্রয়োগ পর্যবেক্ষণ করা।
vii. এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জন করা।
viii. শ্রেণিকক্ষের জ্ঞান ও মাঠকর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা প্রভৃতি।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় চলমান মাঠকর্মের প্রয়োগ কৌশল জানা থাকলে এটি সহজ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় চলমান মাঠকর্মের মাধ্যমে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থী তার জ্ঞানকে বাস্ত বে প্রয়োগ করে থাকে। চলমান মাঠকর্মের বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা গিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্ত বায়ন করে থাকে । তাই সমাজকর্মের মধ্যে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে চলমান মাঠকর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d/