অথবা, চলকের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
অথবা, চলকের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।
অথবা, চলকের ধারন আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : বিজ্ঞান একটি বিমূর্ত প্রত্যয়। আর বিজ্ঞানের ভিত্তি হল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ এবং অব্যাহত অগ্রগতির যাত্রা বজায় রাখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তবে এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি একটি পদ্ধতি নয়, বরং একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়। একটি ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদির সাথে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপনের
মাধ্যমে একটি সাধারণ নিয়মে প্রতিষ্ঠিত করাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম লক্ষ্য। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য কতিপয় উপাদান নিয়ে কাজ করে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে চলক অন্যতম।
চলকের প্রকারভেদ (Types of Variables) : বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চলকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত, চলক সামাজিক বা প্রাকৃতিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক একটি প্রতিনিধি মাত্র।
অনুসন্ধান কাজে উপস্থিত চলকগুলোকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে চলককে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে
উপস্থাপন করলে তা সহজেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ক. প্রকৃতিগত দিক থেকে : প্রকৃতিগত দিক থেকে চলককে দু’ভাগে বিভক্ত করা যায় । যথা :
১. গুণবাচক চলক (Qualitative Variable) : যেসব চলক গুণবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবং যা প্রত্যক্ষভাবে সংখ্যাতাত্ত্বিক এককের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করে উপস্থাপন করা যায় না তাই গুণবাচক চলক। যেমন- আবেগ,
মনোভাব, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি।
২. সংখ্যাবাচক চলক (Quantitative Variable) : যেসব চলক এমন সব বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে যার প্রত্যক্ষ সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ ও উপস্থাপন সম্ভবপর, তাই সংখ্যাবাচক চলক। যেমন- আয়, ওজন, উচ্চতা ইত্যাদি।
খ. পদ্ধতিগত দিক থেকে চলক : পদ্ধতিগত দিক থেকে চলককে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ
১. স্বাধীন চলক (Independent Variable) : একটি অসম সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপস্থিত একটি চলক যখন অন্য একটি চলকের মধ্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয় তখন প্রথমোক্ত চলকটিকে স্বাধীন চলক বলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি অনুকল্প গঠন করা হয় যে, ‘ধূমপান ফুসফুসে ক্যান্সারের জন্ম দেয়’, এক্ষেত্রে ‘ধূমপান’ নিরপেক্ষ চলক।
২. নির্ভরশীল চলক (Dependent Variable) : যে চলকটি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ চলকের প্রভাবে পরিবর্তিত হয় বা যে চলকের মূল্যমান অন্য একটি চলকের উপর নির্ভরশীল এবং এক্ষেত্রে যার কোন প্রত্যক্ষ প্রভাব বা ক্ষমতা থাকে না তাকেই নির্ভরশীল চলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন- যদি এমন একটি অনুকল্প গঠন করা হয় যে, ‘ধূমপান ফুসফুসে ক্যান্সারের জন্ম দেয়’, এক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্যান্সার নির্ভরশীল চলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
৩. নিয়ন্ত্রিত চলক (Controlled Variable) : গবেষণার ভাষায় নিয়ন্ত্রিত চলককে অন্তর্বর্তী চলক, বহিস্থ চলক, মধ্যবর্তী চলক ইত্যাদি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফুসফুসে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ধূমপানের প্রভাব
পরীক্ষণে ব্যক্তির আনুষঙ্গিক শারীরিক সুস্থতা, ব্যক্তির অন্যান্য আসক্তি ও অভ্যাস, তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ইত্যাদি চলকগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় যাতে করে ধূমপানের একক প্রভাব এক্ষেত্রে সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়। ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টিতে ধূমপানের প্রভাব নিরূপণের ক্ষেত্রে উপস্থিত উল্লিখিত চলকগুলোকে নিয়ন্ত্রিত চলক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
গ. গতিপথের নিরিখে চলক : গতিপথের নিরিখে চলকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
১. অবিচ্ছিন্ন চলক (Continuous Variable) : যেসব চলক একটি নির্দিষ্ট উচ্চ ও নিম্নসীমার মধ্যে বিভাজিত মান উল্লেখ করে এবং যার মধ্যে কোন ফাঁক বা বিচ্ছেদ থাকে না তাকেই অবিচ্ছিন্ন চলক বলে। উদাহরণস্বরূপ :
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বস্তুনিষ্ঠ সামাজিক গবে
ষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপস্থিতি এক যুগান্তকারী ঘটনা। সাধারণ কথায় যা পরিবর্তিত হয় তাই চলক। চলক শব্দটি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নির্দেশ দেয় যা একটি গণসংখ্যা নিবেশনে পরিমাণগত বা বিস্তৃতভাবে পার্থক্যপূর্ণ হতে পারে। বস্তুগত বা পরিমাণগত যে কোন পরিবর্তনের সূচক চলক বলে অভিহিত হতে পারে।