অথবা, কেস স্টাডির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকসমূহ লিখ।
অথবা, ঘটনা অনুধ্যানের সবল ও দুর্বল দিকসমূহ লিখ।
অথবা, ঘটনা অনুধ্যানের উপকারিতা ও সমস্যাগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, ঘটনা অনুধ্যানের ভালো দিক ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।
অথবা, ঘটনা অনুধ্যানের নেগেটিভ ও পজেটিভ দিকসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : তথ্যসংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ঘটনা অনুধ্যান (Case Study)। ব্যক্তি সমাজকর্মে এই পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া সামাজিক সমস্যার উদ্ভব ও কার্যকারণ সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য এই পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী। এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট সমস্যার স্বরূপ উদঘাটন করে তার সুষ্ঠু সমাধান
পরিকল্পনায় সহায়তা করা।
ঘটনা অনুধ্যানের সুবিধাসমূহ/ইতিবাচক দিক
সামাজিক গবেষণায় ঘটনা অনুধ্যানে কতকগুলো সুবিধা লক্ষ করা যায়। এ পদ্ধতির সুবিধাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. কেস স্টাডি পদ্ধতি বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে।ফলে এর সাহায্যে সমস্যার সঠিক পথ নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয়।
২. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি সামাজিক গবেষণার বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি ও দুর্বলতা দূর করতেও সহায়তা করে।
৩. এই পদ্ধতিতে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জটিল আর্থসামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলোর কারণ, প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করা যায়।
৪. এই পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব আর্থসামাজিক অবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি, আবেগ, অনুভূতি সামাজিকীকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায়। –
৫. ঘটনা অনুধ্যান নমুনায়নের কোন প্রয়োজন পড়ে না।
৬. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি নতুন চিন্তাভাবনা ও অনুকল্প গঠনে ও তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে যা পরবর্তীতে নতুন গবেষণার পথ নির্দেশনা প্রদান করে।
৭. এই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সমস্যার কারণ, প্রকৃতি, প্রভাব ও গভীরতা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া যায়।
৮. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো বিশেষ ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য চিত্র পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি অধিক উপযোগী। কারণ এই পদ্ধতির দ্বারা ব্যক্তি, দল, পরিবার ও সমষ্টি সম্পর্কে ঘটনা অনুধ্যানের বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্যসংগ্রহ করা যায় এবং সেগুলো বিশ্লেষণপূর্বক বাস্তব ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োগ করা হয়।
ঘটনা অনুধ্যানের সীমাবদ্ধতা/সমস্যা : নিম্নে এই সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হলো :
১. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি রোজনামচা, দলিলপত্র ও অন্যান্য নথিপত্রের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যক্তিগত নথিপত্র, রোজনামচা ও দলিলপত্র পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য। আবার পাওয়া গেলেও সেখানে অনেক কিছু অতিরঞ্জিত থাকে যা দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় না।
২. এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের সাধারণীকরণ ও তুলনামূলক তথ্য উপস্থাপনের সুযোগ অনেকটাই সীমিত।
৩. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা। যার ফলে এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে ব্যক্তির মূল্যবোধ, চিন্তাচেতনা প্রভাব পড়ে।
৪. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে ঘটনার সামগ্রিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। তাছাড়া প্রাপ্ত তথ্যের কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোন সুযোগ নেই।
৫. এই পদ্ধতিতে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব হয় না। ফলে এটি অপেক্ষাকৃত কম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
৬. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, আচার আচরণ, মূল্যবোধ ও তার পরিবেশ সম্পর্কে নিবিড়ভাবে জানার চেষ্টা করা হয় বলে এ পদ্ধতিতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।
৭. এই পদ্ধতি গভীর জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ গবেষকের, প্রয়োজন হয় কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দক্ষ গবেষক ও তথ্যসংগ্রহকারী পাওয়া সম্ভব হয় না।ফলে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভুলতা সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যায়।
৮. এই পদ্ধতিতে স্বল্পসংখ্যক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।তাই এর সাধারণীকরণ করা বেশ কঠিন।
৯. উল্লেখ্য গবেষণা কাজে গবেষক ছাড়া অন্য কেউ বিস্তারিতভাবে জানতে পারে না। এক্ষেত্রে তার মতামতকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। যার ফলে এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যানুসন্ধানের ক্ষেত্রে ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ পদ্ধতি অধিক উপযোগী একটি পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতির দ্বারা ব্যক্তি, দল, পরিবার ও সমষ্টি সম্পর্কে ঘটনা অনুধ্যানের বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্যসংগ্রহ করা যায় এবং সেগুলো বিশ্লেষণপূর্বক বাস্তব ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োগ করা হয়।