অথবা , গ্রিসে এখেলের সমাজব্যবস্থায় ধারণা দাও ।
অথবা , গ্রিসে এথেলের সমাজব্যবস্থার কাঠামো বর্ণনা কর । অথবা , গ্রিসে এখেলের সমাজব্যবস্থার পরিচিতি দাও ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে প্রাচীন গ্রিসের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । বর্তমান সমাজ ও সভ্যতার উৎপত্তি , ভিত্তি ও বিকাশ জানতে হলে প্রাচীন গ্রিসের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন । গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হলেও এগুলোর সামাজিক স্তর বিন্যাস বা বিভাজন ছিল প্রায় অভিন্ন । সামাজিক শ্রেণীগুলোর নামকরণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকলেও প্রকৃতিগত পার্থক্য তেমন ছিল না ।
এথেলের সমাজব্যবস্থা : এথেন্সের সমাজব্যবস্থা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল । এ তিনটি শ্রেণী রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ছিল । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. নাগরিকগণ : এথেন্সের জনসমাজের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল নাগরিকগণ অর্থাৎ যারা নগরের সদস্য হওয়ার এবং নগরের রাজনীতিতে যারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারত । নাগরিক হওয়ার সুযোগ তারা জন্মসূত্রেই লাভ করতো । কারণ তাদের পিতামাতা যে নগরের নাগরিক সন্তানগণও সে নগরের নাগরিক বলে গণ্য হতো । নাগরিকতার অর্থই হলো নগরের সদস্যপদ লাভ । নগরের সদস্যপদ লাভের ন্যূনতম কাজ হলো শহরের সভায় উপস্থিত থাকা । এ নাগরিকগণ আবার দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল । যথা : নোবলস এবং কমন্স । নোবলসরা নিজেদের উচ্চ বংশীয় বলে মনে করত এবং রাষ্ট্র শাসনের ভার তাদের উপরই ছিল । এরা সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতো ।
২. মেটিক্স বা বিদেশিগণ : প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থায় দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে মেটিক্স্ বা বিদেশিগণ । এরা দাসদের উপরের স্তরের । এথেন্সের মতো বাণিজ্য প্রধান নগরে তাদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত বেশি । দাসদের মতো বিদেশিদেরও নগরের রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ ছিল না । তবে তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ভোগ করত ।
৩. দাস ( Slave ) : সমাজের সর্বনিম্নস্তরে ছিল দাসগণ । এ দাসদের সংখ্যা ছিল প্রায় এক – তৃতীয়াংশ । দাস প্রথা প্রাচীন গ্রিসে সর্বজনীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল । দাসগণ সমাজের কোন প্রকার সামাজিক বা রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করত না । সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণার্থে এথেন্সের জনগণ কোন প্রকার প্রচেষ্টা চালায় নি , বরং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য তারা দাসপ্রথাকে অপরিহার্য মনে করত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , প্রাচীন গ্রিসের দুটি নগররাষ্ট্রের মধ্যে এথেন্সের সমাজব্যবস্থা ছিল মূলত পাস নির্ভর । অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে অতিমাত্রায় দাস নির্ভর ছিল । তাদের প্রয়োজনীয় সকল কাজ দাসদের মাধ্যমেই সম্পাদিত হতো । মূলত দাস ব্যবস্থা ছিল সর্বজনীন ও সমাজ ব্যবহার অবিচ্ছেদ অংশ । যার বেশি সংখ্যক দাস ছিল সে সমাজে বেশি সম্মানিত বলে বিবেচিত হতো ।
প্রশ্ন ॥ গ্রিসের স্পার্টার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা , গ্রিসের স্পার্টার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দাও ।
অথবা , গ্রিসের স্পার্টার সমাজব্যবস্থা বর্ণনা কর ।
অথবা , গ্রিসের স্পার্টার সমাজব্যবস্থা কাঠামো বর্ণনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্পার্টা ছিল সবচেয়ে উন্নত ও সুন্দর । এর স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সামাজিক কাঠামো তৎকালে চিন্তাবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল । প্লেটো , এরিস্টটল ও অন্যান্য দার্শনিক স্পার্টার রাষ্ট্রব্যবস্থা , সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন তাদের রচনায় এ সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায় । নিম্নে স্পার্টার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
স্পার্টারের সমাজব্যবস্থা : এথেন্সের ন্যায় স্পার্টাও প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নগররাষ্ট্র । এ রাষ্ট্রেও তিন শ্রেণীর লোক বাস করতো । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. ডোরিয়ান ( Dorian ) : ডোরিয়ান বংশোদ্ভূত লোকেরা ছিলেন স্পার্টার সর্বোত্তম শ্রেণীর লোক । তারা ভূসম্পত্তি রাখতে পারলেও কোন ব্যবসায় বাণিজ্যে লিপ্ত হতে পারতেন না । প্রকৃতপক্ষে তারাই ছিল স্পার্টার যথার্থ নাগরিক । শৈশবকাল থেকে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু হতো এবং পরিণত বয়স পর্যন্ত চলতো । তরুণ বয়সে তারা দেশের প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকতেন এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যখন তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিপূর্ণতা আসত তখন তাদেরকে দেশ শাসনের দায়িত্ব অর্পণ করা হতো । তারপর তারা দেশ শাসন করতেন , পাশাপাশি তারা জ্ঞানেরও চর্চা করতেন ।
২. পেরিঅয়কয় ( Perioikoi ) : দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদেরকে বলা হতো পিরিঅয়কয় বা মধ্যবিত্তশ্রেণী । এরা ছিল প্রধানত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী । এদের সামাজিক অধিকার ছিল বটে কিন্তু কোন রাজনৈতিক অধিকার ছিল না ।
৩. হেলটস ( Helots ) : স্পার্টার সর্বনিম্ন শ্রেণীর লোকদেরকে হেলটস বলা হতো । তারা ছিল মূলত দাসশ্রেণীভুক্ত । কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রভু শ্রেণীর সেবা করাই ছিল তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য । রাজনৈতিক জীবনে তাদের কোন অধিকার ছিল না ; এমনকি সামাজিক জীবনেও তারা ছিল অবহেলিত ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় . গ্রিসের স্পার্টাতে তিনটি শ্রেণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় । এদের মধ্যে ডোরিয়ান বংশোদ্ভূত লোকেরা ছিলেন স্পার্টার সর্বোত্তম শ্রেণীর লোক । মূলত এদের উপর রাষ্ট্র পরিচালনা ও শাসনের চালনার পাশাপাশি দেশের কলও আচরণে ও বাস্ত থাকত ।
প্রশ্ন ॥ প্লেটোর দার্শনিক রাজার উৎস আলোচনা কর ।
অথবা , প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন আলোচনা কর ।
অথবা , প্লেটোর দার্শনিক রাজার প্রকৃতি আলোচনা কর ।
অথবা , প্লেটোর দার্শনিক রাজার তাৎপর্য আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা , যার শাসক হবেন তাঁর শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের ন্যায় জ্ঞানী । সমসাময়িক কালের রাষ্ট্র নায়কদের অশিক্ষাকেই তিনি নগর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনৈক্য , বিশৃঙ্খলা , যুদ্ধবিগ্রহ এবং পতনের জন্য দায়ী বলে মনে করতেন । এ কারণেই তিনি তাঁর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য , সংহতি , শান্তি , প্রগতি ও উন্নয়ন ঘটাতে এমন একজন শাসক সৃষ্টি করতে চেয়েছেন যিনি হবেন পরম জ্ঞানী । তিনি তার দর্শনের জ্ঞান ও সত্যের আলোকে আইন তৈরি করবেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন ।
দার্শনিক রাজার উৎস : প্লেটো প্রদর্শিত দার্শনিক রাজার শাসন সক্রেটিসের ‘ সৎ গুণই জ্ঞান ‘ এ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । এর ‘ অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো , যে ব্যক্তি প্রকৃত ও পূর্ণ জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছেন , তিনি জানেন যথার্থ সততা বা পুণ্য কি ? প্লেটোর মতে , “ যিনি দার্শনিক , কেবল তিনি এসব জ্ঞানের অধিকারী । ” তাছাড়া আদর্শ রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোত্তম নাগরিক ও সর্বোত্তম মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই । সুতরাং কোন রাষ্ট্রের যথার্থ আদর্শ রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করতে হলে শাসনের ভার দার্শনিক শাসকের হাতে অর্পণ করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই । অধ্যাপক সেবাইন বলেছেন , “ যারা সত্যিকার জ্ঞানী অর্থাৎ যারা জানেন যে , আদর্শ রাষ্ট্রের প্রয়োজন কি এবং কোন পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করলে এ প্রয়োজন মিটানোর উপযোগী নাগরিক গঠন করা যায় তাদের হাতে শাসনের ক্ষমতা ন্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রের পরিত্রাণের কোন আশাই নেই ।
প্লেটোর দার্শনিক রাজা : বিষয়ভিত্তিক সঠিক ও সুনির্দিষ্ট বিষয়াবলি নির্ধারণের মাধ্যমে প্লেটো শিক্ষাতত্ত্বকে প্রাথমিক ও উচ্চ পর্যায় এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন । উভয় পর্যায় থেকে যারা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হবেন , তাদেরকে তার পরিকল্পিত আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে অভিভাবক শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন । অভিভাবক শ্রেণীর সবচেয়ে যোগ্য ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিকে তিনি ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে দার্শনিক রাজা বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , সামগ্রিকভাবে প্লেটোর চিন্তাধারা ও দর্শনের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , তাঁর সমসাময়িক কালের অপরাপর দার্শনিকদের চিন্তার প্রভাব পড়েছে তাঁর উপর । আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজা সকল আইনের ঊর্ধ্বে । প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনায় দার্শনিক রাজাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন । দার্শনিক রাজা তার প্রজ্ঞা দ্বারা রাষ্ট্র শাসন করার ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাশালী হবেন ।