অথবা, গ্রাম সরকারের কার্যক্রম আলোচনা কর।
অথবা, গ্রাম সরকারের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
অথবা, গ্রাম সরকার কী কী কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গ্রাম সরকার (Village Government) ব্যবস্থা বাংলাদেশের স্থানীয় শাসনের ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় সকলেই ভিন্ন ভিন্ন নামে এ ধরনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি গ্রামকে সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার যে অব্যাহত প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন, তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান জোট সরকার এ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
গ্রাম সরকারের কার্যাবলি : গ্রাম সরকারের সার্বিক কার্যাবলি হচ্ছে গ্রাম বাংলার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করা। এর মধ্যে নিম্নলিখিত কাজগুলো অগ্রগণ্য বা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :
১. গ্রামের রাস্তাঘাট, কালভার্ট ইত্যাদি উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি ও আর্থিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করা।
২. নারীনির্যাতন, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলাসহ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং ইউনিয়ন পরিষদে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করা।
৩.প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধকরণ, পুষ্টি টিকাদান ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান করা এবং মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের কাজের উপর ইউনিয়ন পরিষদে
প্রতিবেদন পেশ করা।
৪.নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি তদারক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও মক্তবের লেখাপড়ার খোঁজখবর রাখা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ইউনিয়ন পরিষদে পেশ করা।
৫. জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কিত খবর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে ইউনিয়ন পরিষদে প্রেরণ করা।
৬. কৃষি উন্নয়নে সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ সম্পর্কে অবহিত থাকা এবং সংকট দেখা দিলে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করা।
৭. আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা এবং গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিবাদ-বিসংবাদ নিষ্পত্তির চেষ্টা করা।
৮. ভিজিএফ ও ভিজিটি কার্যক্রম তদারক করা।
৯. বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
১০. ক্রীড়ার উন্নয়ন, সমবায় সমিতি গঠন, ক্ষুদ্র শিল্প ও খামার প্রতিষ্ঠা, বৃক্ষ রোপণ ও পরিবেশ সংরক্ষণসহ সরকার নির্ধারিত অন্যান্য কাজ করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, গ্রামসরকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। এর গঠন কাঠামো অত্যন্ত সুসামঞ্জস্য ও ভারসাম্যপূর্ণ । নির্দিষ্ট সময়ান্তে এর কার্যক্রম পরিচালিত হতো। বর্তমানে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও এটি ছিল অন্যতম প্রশাসনিক ইউনিট।