উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিরচিত ‘বাঙ্গালা ভাষা’ প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে প্রাবন্ধিক প্রাচীনপন্থি সংস্কৃতসেবী গ্রন্থ প্রণেতাদের বাংলা ভাষা বিষয়ক ধ্যান-ধারণাকে নির্মম ভাষায় কটাক্ষ করে এ উপমা ব্যবহার করেছেন।
বিশ্লেষণ : বাংলা ভাষার প্রাথমিক পর্বে সাধু ভাষার একচেটিয়া রাজত্ব ছিল। তখন আভাঙা সংস্কৃত শব্দে বাংলা রচিত হতো। লোকে বুঝুক আর না বুঝুক দুর্বোধ্য সংস্কৃত শব্দ না হলে বাংলা রচনা করা যাবে না বলে তখনকার লেখকরা মনে করতেন। সাধু ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষা বাংলা গদ্য গ্রন্থে ব্যবহৃত হতো না। তখন পুস্তক প্রণয়ন সংস্কৃত ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল। সংস্কৃতই তাঁদের গৌরব ও অহঙ্কার। তাঁরা ভাবতেন সংস্কৃতেই বুঝি বাংলা ভাষার গৌরব। যেমন গ্রাম্য বাঙালি স্ত্রীলোক মনে করে যে শোভা বাড়ুক আর না বাড়ুক ওজনে ভারি সোনা অঙ্গে পরলেই অলঙ্কার পরা সার্থক হলো। এ গ্রন্থকর্তারা তেমনি ভাবতেন ভাষা সুন্দর হোক আর না হোক দুর্বোধ্য সংস্কৃত শব্দের বাহুল্য থাকলেই রচনা সার্থক। এ সংস্কৃতপ্রিয়তা এবং সংস্কৃতানুকারিতার জন্য বাংলা সাহিত্য নীরস, শ্রীহীন, দুর্বল এবং বাংলা সমাজে অপরিচিত হয়ে পড়েছিল। প্রাচীনপন্থি সংস্কৃতসেবীদের এ গোঁড়ামি অশিক্ষিত গ্রাম্য মহিলাদের অন্ধত্বের সাথে তুলনীয়।
মন্তব্য: দুর্বোধ্য ও অপ্রচলিত সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগে যাঁরা বাংলা সাহিত্য রচনায় ব্রতী ছিলেন তাঁরা অন্ধ ও গোঁড়া। তাঁদের রচনা বাংলা ভাষাকে নীরস, শ্রীহীন, দুর্বল ও অপরিচিত করে তুলেছিল।