অথবা, গ্রামীণ সমাজসেবা /পল্লি সমাজসেবায় মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, গ্রামীণ সমাজসেবায় পল্লিা সমাজকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পাল্লা সমাজসেবায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের পরিধিসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে মাঠকর্ম অনুশীলনকারীর যথেষ্ট ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
গ্রামীণ সমাজসেবা /পল্লি সমাজসেবায় মাঠকর্ম অনুশীলনকারীর ভূমিকা
নিম্নে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি বাস্তবয়নে মাঠকর্ম অনুশীলনকারীর ভূমিকা বর্ণনা করা হলো :
১. চাহিদাপত্র তৈরি : একটি উপজেলায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ভাতাসহ নানাবিধ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। তাছাড়া ক্ষুদ্রণদান কর্মসূচি, সেলাই প্রতিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, এমব্রয়ডারি বিষয়ে প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচিও গৃহীত হয়। এসব কর্মসূচি সম্পর্কিত চাহিদাপত্র তৈরি করতে মাঠকর্ম অনুশীলনকারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া তিনি তার এলাকায় সম্পাদিত কর্মসূচির অগ্রগতির প্রতিবেদনও দাখিল করে থাকেন।
২. সমন্বয়সাধন : উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি সমাজসেবামূলক কাজের সাথে জড়িত একজন মাঠকর্ম অনুশীলনকারী সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রক্ষাপূর্বক তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।তাছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেও তিনি সমন্বয়সাধনে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সহায়তা করতে পারেন।
৩. সাংগঠনিক কাজ : কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দল ও প্রতিষ্ঠানের কাজকে সুচারুভাবে সম্পাদনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে। গ্রামীণ পর্যায়ে বিভিন্ন সেবা সংগঠন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তিনি সাহায্য করেন। শিক্ষানবিস সমাজকর্মীরা এক্ষেত্রে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে সাহায্য করতে পারেন।
৪. নেতৃত্ব প্রদান : মাঠকর্ম অনুশীলনকরীরা বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা উপজেলা পর্যায়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে যেসব সমিতি রয়েছে সেসব সমিতিতে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
৫. তত্ত্বাবধায়ন : গ্রামীণ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব সমাজসেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় সেসব প্রকল্প কর্মীদের কার্যাবলি তদারকির দায়িত্ব উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের। মাঠকর্ম অনুশীলনকরীরা বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের এ কাজে সহায়তা করতে পারে।
৬. প্রশিক্ষণ প্রদান : দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, নেতৃত্বের বিকাশ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। মাঠকর্ম অনুশীলনকরীরা বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কাজে সহায়তা করতে পারে।
৭. সচেতনতা প্রদান : পল্লি এলাকার অজ্ঞ, নিরক্ষর ও সাধারণ মানুষকে বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথার কুফল, পুষ্টি, বৃক্ষরোপণ, শিশুদের স্কুলে ভর্তি, সম্পদের সঠিক ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। মাঠকর্ম অনুশীলনকরীরা বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের এ কাজে সহায়তা করতে পারে।
৮. জরিপ ও গবেষণা : মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা একটি উপজেলার নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতিবন্ধী, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, দলীয় জনগোষ্ঠী (যেমন- মেথর, হরিজন, বেদে সম্প্রদায়, পাটনী) এবং অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর ক্ষুদে গবেষণা পরিচালনা করে তাদের প্রকৃতি অবস্থা যাচাই করতে পারে এবং এদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক সুপারিশও দিতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়- মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা পল্লি এলাকার দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে পারে। তারা একটি সুনির্দিষ্ট এলাকার সমাজসেবামূলক কর্মসূচির সমন্বয় ও তদারকি করতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে সাহায্য করতে পারে।গ্রামপর্যায়ে গতিশীল নেতৃত্বের বিকাশেও তারা ভূমিকা রাখতে পারে।