উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ গ্রামীণ সমাজসেবার মূলনায়ক হলো গ্রামীণ সমাজসেবার কর্মকর্তা । সমন্বিত প্রক্রিয়া হিসেবে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গ্রামীণ সমাজসেবার গুরুত্ব অত্যধিক। আর এতে সবচেয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা। গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোর মাঝে শিক্ষা, অধিকার সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নে সচেষ্ট হতে সাহায্য করে। তাই গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
→ গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তার ভূমিকা ঃ গ্রামীণ সমাজসেবা গ্রামে নানাবিধ উন্নয়ন প্রচেষ্টার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তার ভূমিকাগুলো নিম্নরূপঃ
১. সামঞ্জস্য বিধান ৪ গ্রামীণ সমাজসেবা জনগণ, তাদের সমস্যা ও সম্পদের মাঝে সুসামঞ্জস্য বিধান করে থাকে। ফলে উন্নয়ন আরো গতিশীল হতে থাকে।
২. আর্থ-সামাজিক জরিপ পরিচালনা ঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তারা গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার জরিপ পরিচালনা করে থাকে। তারা এই জরিপ পর্যালোচনা করে বাস্তবমুখী গ্রামোন্নয়ন পরিকল্পনা নীতি গ্রহণে সক্ষম হয়।
৩. জনগণকে সুসংগঠিতকরণ ঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রধান কাজ হলো সমগ্র গ্রামীণ জনগণকে লক্ষ্যভুক্ত দলে দলে ভাগ কারা সংগঠিত করা । তিনি প্রয়োজনে ঐসব দলগুলোতে নেতা নির্বাচন করে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে।
৪. পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা : গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তিনি সহজেই যাতে ঐসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য গ্রামবাসীকে সার্বিকভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
৫. স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন সাধন ঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা গ্রামের মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি সব সময় গ্রামবাংলার উন্নয়নে প্রবিষ্ট থাকেন। এ ধরনের কর্মকর্তা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেমন-রাস্তাঘাট ও সেতুপুল নির্মাণে পুকুর খনন ও সমাজ সংস্কার ইত্যাদি সাধন করে থাকে ।
৬. স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ ঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা গ্রামের স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে সচেষ্ট থাকেন। তার সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সমাজ উন্নয়নে নেতৃত্ব করে। ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল হয়ে উঠে।
৭. জনগণকে সচেতন ও সুশিক্ষিত করা ঃ বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। তারা নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। তাদেরকে অধিকার ও দায়িত্ব সচেতন করে তুলাতে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা বয়স্ক, শিশুসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ফলে গ্রামের এসব মানুষ সচেতন ও সুশিক্ষিত হবার সুযোগ পায়। যা গ্রামোন্নয়নের জন্য খুবই সহায়ক।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা গ্রামবাসীর পরম বন্ধু ও উন্নয়নের নায়ক। এ কর্মকর্তা দরিদ্র, অসহায়, নিরক্ষর ও অজ্ঞ গ্রামবাসীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে স্বনির্ভরশীল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধনে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তা নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চলিয়ে যায়। ৮০% লোকের বাস গ্রামে। গ্রামের উন্নয়ন মানেই সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন। তাই, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মকর্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।