উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) বাংলা আধুনিক কবিতার প্রথম সার্থক রূপকারে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি মূলত মহাকবি এবং নাট্যকার হতে পরিচিত ছিলেন। ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য তার সর্বশ্রেষ্ঠ কতি মহাকাব্য নাটক, এবং তার পাশাপাশি তিনি কিছু গীতিকবিতাও রচনা করেছেন। তার লেখা ‘আলােচ্য আবিলাপ’ কবিতা তার রচনার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে তার গীতিকবিতা ‘আত্মবিলাপ’ এর সার্থকতা নিয়ে আলোচনা করা হল।
গীতি কবিতা হিসেবে ‘আত্মবিলাপ-এর সার্থকতা:
অনুভূতির প্রকাশ: ‘আত্মবিলাপ’ কবিতাটিতে কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি ও আবেগের স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
গীতধর্মী ভাষা: কবিতাটিতে গীতধর্মী ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
ছন্দের ব্যবহার: কবিতাটিতে ত্রিপদী ছন্দের ব্যবহার করা হয়েছে।
সঙ্গীতের ব্যবহার: কবিতাটি সঙ্গীতের সাথে গেয়ে শোনার উপযোগী।
আবেগের তীব্রতা: কবিতাটিতে আবেগের তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়।
কল্পনার ব্যবহার: কবিতাটিতে কল্পনার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
প্রতীকের ব্যবহার: কবিতাটিতে প্রতীকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
উপমা ও রূপকের ব্যবহার: কবিতাটিতে উপমা ও রূপকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
ভাষার সাবলীলতা: কবিতাটির ভাষা সাবলীল ও সহজবোধ্য।
চিত্রকল্পের ব্যবহার: কবিতাটিতে চিত্রকল্পের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
স্বতন্ত্র ভাবধারা: কবিতাটিতে স্বতন্ত্র ভাবধারার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
গীতিকবিতা: গীতিকবিতা একটি ছন্দময় রচনা, যা ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট। এই শৃঙ্গারিত শখ কেন্দ্রিক ছন্দ নিয়ে প্রবর্তক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বিহারীলাল চক্রবর্তী তার গীতিকবিতায় উচ্চতম সুনাম অর্জন করেছেন। ইংরেজি লিরিককে বাংলায় গীতিকবিতা হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে। গীতিকবিতার মাধ্যমে কবিরা নিজেদের জীবন অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিস্মৃতির আলোকে সাধারিত শব্দে আত্মীয়তা অভিজ্ঞতা তৈরি করেন, যা পাঠকদের জীবনের অভিজ্ঞতা সাথে মিলে তাদের সাধারিত করতে সাহায্য করতে পারে। তাদের ছন্দে আত্মভাবনা সবজনীনভাবে তীর্ণ হয়, এবং তারা চমৎকারভাবে তাদের রচনা উপস্থাপন করে। তবে, কবির অভিজ্ঞতা ও আত্মবিস্মৃতির সাথে সঙ্গত হিসেবে তার তীব্র প্রয়াসটি লক্ষ করা যায়।
গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য: গীতিকবিতা মূলত ক্ষুদ্র আকারের হয় এবং তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছন্দোবদ্ধ চরণ বিন্যাসে রয়েছে। এক চরণ থেকে অন্য চরণে কবিতা প্রবর্তিত হয় এবং এই চরণসমূহ গীতিকবিতার সার্থকতা তৈরি করে তােলা হয়। গীতিকবিতার চরণসমূহে সাবলীল গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, এবং কবি তার ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং ভাববাচ্ছাসকে কালাতীত অক্ষরের শৃঙ্খলে কবিতার কারাগারে বন্দী রাখেন। এই কবিতা পাঠকের মধ্যে ভাবতন্ময়তা সৃষ্টি করে এবং পাঠক কবির সাথে নিজেকে একাত্ম করে ফেলেন। গীতিকবিতায় কোন কাহিনির স্থান নেই; সমগ্র কবিতায় একটি মাত্র ভাব প্রকাশের বেদনা মূর্ত হয়।
গীতিকবিতার সার্থক সষ্টা: বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিহারীলাল চক্রবর্তী, কাজী নজরুল ইসলাম, গােলাম মােস্তফা এসেছেন বাংলা গীতিকবিতার উন্নত সার্থক স্রষ্টা। তাদের শখে এ ক্ষেত্রে অনগ্রসর হয়েছে অসংখ্য গীতি এবং কবিতা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্মবিলাপ কবিতার মাধ্যমে আমরা ব্যক্তি হৃদয়ের উত্তাপ অনুভব করতে পারি। তার জীবনচিত্র এবং তার কবিতা থেকে প্রাপ্ত আত্মচিন্তা ও বেদনা একসাথে চিরকাল চিত্রিত হয়েছে। কবির অতীত জীবনের বিচারে প্রবণতা এবং তার মাধ্যমে উত্তাপ থেকে উত্তীর্ণ হতে চলার যে দৃষ্টিকোণ প্রতিষ্ঠান করেছেন, সেটি প্রকাশ্যে ‘আত্মবিলাপ’ গীতিকবিতার মর্যাদা লাভ করতে পারে।
গীতিকবিতা হিসেবে আত্মবিলাপ: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্মবিলাপ’ কবিতা বাংলা সাহিত্যে একটি অমূল্য গীতিকবিতা হিসেবে পরিচিত। এই কবিতায় কবি তার আত্মা ও ব্যক্তিজীবনের ব্যর্থতা এবং হতাশার ভাবনা নিয়ে কাহিনী বলেছেন। ছন্দে ছন্দে প্রকাশ পাওয়া এই কবিতা মানুষের সুখ ও হতাশার মুখোমুখি সাংঘাতিক অভিব্যক্তি করে। সুখ যেগুলি স্বপ্নের ভিত্তিতে বিকশিত হয়, সেগুলি রাত্রির স্বপ্নে পূর্ণ হতে অসমর্থ এক মানুষের অসুখ ও হতাশার দাস্তানি। কবি এই কষ্টের দৃষ্টিকোণ থেকে তার মন ও মুকুটের ভিন্ন সুন্দরতা উজ্জ্বল করেছেন, যা বাংলা সাহিত্যে এক অদ্ভুত অবদান। কবি এ সম্পর্কে বলেছেন-
“নিশার স্বপন সুখে
সুখী যে, কী সুখ তার?
জাগে সে কাঁদিতে!”
কবি নিজের জীবন অভিজ্ঞতার আলােকে মানুষের এ ব্যর্থতাজনিত বিলাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন এ কবিতায়।
আত্মবিলাপ কবিতার মূল্যায়ন: আশা ছলনাময়ী। আশার পেছনে দলে দলে মানুষ অবাক হয়ে যায়, এবং জীবনের সুখশান্তি থেকে তাদের বঞ্চিত করতে হতে পারে। এই বঞ্চনা যতটুকুই চলতে থাকুক, তা নষ্ট হতে থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে এটি তার জীবনের সময় নীড়ে আসতে থাকে।
একটি সময় আসতে পারে যখন এই বঞ্চনার মুখোমুখি হওয়া থামবে, তবে এটি কোনো সময়েই থামবে না। এটি যখন বোঝা যায় যে, এ ছোটখাটি অর্থহীন তখন তার সমস্ত অন্তরাত্মা শোকাহারে মগ্ন হয়। এই অবস্থায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এবং তার কবিতা তার আত্মবিলাপ আবদ্ধ করে। সমস্ত মানব জাতি তার কবিতায় নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করা মাধ্যমে তার দুঃখ শেয়ার করে। এই কবিতা পড়লে পাঠকও নিজেকে এটির মাধ্যমে আবদ্ধ করতে পারে এবং কবির অভিজ্ঞান চরণে চরণে অনুভব করতে পারে। ফলে কবির এই অনুভূতি সার্বজনীন হয়ে উঠেছে, এবং ‘আত্মবিলাপ’ গীতিকবিতা হিসেবে একটি কার্যকর স্বীকৃতি পায়েছে। এটি সমস্ত মানবজাতির মনের কথাকে সঠিকভাবে প্রকাশ করে।
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, ‘আত্মবিলাপ’ কবিতাটি একটি সার্থক গীতি কবিতা।