গারো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস কি ছিল?

গারো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস:

গারো নৃগোষ্ঠী তিব্বত-বর্মী ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠী যাদের আদি বাসভূমি ছিল চীনের সিন কিয়াং প্রদেশ। ধারণা করা হয়, তারা দীর্ঘদিন তিব্বতে বসবাস করেছিলেন এবং তারপর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এসে বসবাস শুরু করেন। গারো পাহাড়ে তাদের বসবাস শুরু হয় প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে।

উল্লেখযোগ্য তথ্য:

  • মাতৃতান্ত্রিক সমাজ: গারোদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারের কর্তা ও সম্পত্তির অধিকারী হলেন মা। পিতা পরিবারের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন।
  • উৎসব: গারোদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হল ‘ওয়ানগালা’। এছাড়াও ‘দেন বিলসিয়া’, ‘আসিরকা’, ‘মিচিল তাৎ’, ‘আহাইয়া’, ‘ওয়ানগালা ও ঘুরে ওয়াতা’, ‘আ’বিয়া’ ইত্যাদি উৎসব পালন করে থাকে।
  • ভাষা: গারো ভাষা চীনা-তিব্বতী ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। বাংলাদেশে আবেং উপভাষাটি প্রচলিত, যদিও লেখার জন্য আচিক উপভাষা ব্যবহার করা হয়।
  • ধর্ম: গারোদের ঐতিহ্যবাহী ধর্ম ‘সংসারেক’। এছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বী গারোও রয়েছে।
  • জীবিকা: গারোরা প্রধানত কৃষিজীবী। ধান, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, কাচা মরিচ তাদের প্রধান ফসল।

গারোদের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:

  • ১৮৭৬: ব্রিটিশরা গারো পাহাড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
  • ১৯৪৭: ভারত বিভাগের পর গারো পাহাড়ের অধিকাংশ অংশ ভারতের অংশ হয় এবং কিছু অংশ পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অংশ হয়।
  • ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গারোরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ১৯৭২: গারো পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসিত ‘গারো হিলস জেলা পরিষদ’ গঠিত হয়।

বর্তমানে:

গারোরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তাদের ভাষা, পোশাক, রীতিনীতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর থেকে আলাদা। গারোদের উন্নয়নে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।