গারোদের মাতৃতান্ত্রিক বলা হয় কেন?
অথবা, গারো সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক? বর্ণনা কর।
অথবা, কেন গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক?
অথবা, গারো সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা’ : বাংলাদেশে গারো নামে একটি এথনিক সম্প্রদায় রয়েছে। এই গারো সমাজ প্রধানত মাতৃসূত্রীয় । এরা মাতৃসূত্রীয় রীতিতে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।গারোদের মাতৃতান্ত্রিক বলার কারণ : গারো পরিবার মাতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ সম্পত্তি ও বংশ নাম মাতৃধারায়
মাতা থেকে মেয়েতে বর্তায়। গারো দম্পত্তি স্ত্রী বাবার গৃহে বসবাস করে। অর্থাৎ সেখানে মাতৃবাস (Matrilocal) রীতি অনুসরণ করা হয়। তবে ইদানিং কিছু শিক্ষিত গারো স্বামীর গৃহে বাস করে। গারো পরিবার মাতৃপ্রধান। পরিবারের ক্ষমতা তাত্ত্বিকভাবে স্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত। পরিবারের সম্পত্তির মালিক স্ত্রী। তবে, ব্যবস্থাপনার মালিক স্বামী। তাই, কোনো বিষয়ে
সিদ্ধান্ত নিতে হলে উভয়েরই যৌথভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
গারো সমাজে স্বামী, স্ত্রীর উপর প্রভুত্ব খাটাতে বা নির্যাতনের কৌশল অবলম্বন করতে পারে না। কেননা, জ্ঞাতি গোষ্ঠীর লোকজন এসব ব্যাপারে সহসাই হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। গারোদের সম্পত্তি মালিকানা ও তার উত্তরাধিকার রীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। একটি আদর্শ গারো পরিবারে মহিলাই সব সম্পত্তির মালিক এবং মাতা থেকে
মেয়েই সম্পত্তি অর্জন করে। অর্থাৎ গারো পুরুষেরা সম্পত্তির মালিক নয় বা উত্তরাধিকারীও নয়। কোনো মহিলার সম্পত্তি তার যেকোনো একটি কন্যাতে উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তায়। যে কন্যা (প্রায়ই কনিষ্ঠা) মাতা থেকে সম্পত্তি অর্জন করে তাকে বলা হয় নোকনা। নোকনা অর্থ পরিবারের ভিত্তি। রীতি অনুযায়ী নোকনার বোনেরা তাদের মাতা থেকে সম্পত্তি পায় না । নোকনার পিতা-মাতাই নোকনার জন্য পাত্র-স্বামী পছন্দ করে। নোকনীর স্বামীকে বলা হয় নোকরম। নোকরম অর্থ
পরিবারের খুঁটি বা স্তম্ভ। নোকনা ও নোকরম নোকনার বাবা-মার বাড়িতেই বসবাস করে বা করতে হয়। নোকরম ও নোকনা উভয়ই নোকনার বৃদ্ধ বাবা-মার সেবাযত্ন করতে বাধ্য। গারো বিয়েতে স্বামী কোনো যৌতুক পায় না। উপর্যুক্ত কারণে গারোদেরকে মাতৃতান্ত্রিক বলা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, গারো সমাজের সব সময় মাতৃতান্ত্রিক রীতি মেনে চলা হয় এবং সম্পত্তি, বিবাহ, সংগঠন মাতৃতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হয়। তবে ইদানিং গারো সমাজে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।