গবেষণামূলক সমস্যার নির্বাচন প্রক্রিয়াটি লিখ।

অথবা, সমস্যার নির্বাচন প্রক্রিয়াটি লিখ।
অথবা, সমস্যা নির্বাচনের প্রধান তিনটি ধাপ লিখ।
অথবা, সমস্যার বাছাই প্রক্রিয়াগুলো কী কী?
অথবা, সমস্যার নির্বাচন প্রক্রিয়াগুলো কী কী?
উত্তর।। ভূমিকা : কোন না কোন সমস্যাকে কেন্দ্র করেই বিজ্ঞানের গবেষণা বা আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়। কোন সমস্যাকে ঘিরেই তার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। আবার প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে তা বৈজ্ঞানিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ ধরনের চেষ্টার পদ্ধতিকে বলা হয় বিজ্ঞান।
সমস্যা ছাড়া সমাধানের যেমন কোন অর্থ হয় না, তেমনি সমস্যা ব্যতীত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেরও কোন অর্থ হয় না। তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে জানতে বা বুঝতে হলে প্রথমে যে বিষয়টি জানা দরকার তা হলো সমস্যা।
গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়া : বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। গবেষণার যথাযথ সমস্যা গ্রহণ খুবই প্রয়োজন। কারণ সমস্যাকে ঘিরেই সবসময় গবেষণা পরিচালিত হবে। গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি প্রধানত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। নিম্নে এই ধাপগুলো আলোচনা করা হলো :
গবেষণার সমস্যাকে সংজ্ঞায়িত করতে কারলিঙ্গার (Kerlinger) বলেন যে, “সমস্যা হলো এমন একটি প্রশ্নবোধক বাক্য বা উক্তি, যা দুই বা ততোধিক চলের মধ্যকার সম্পর্ককে জানতে চায়।”
সমস্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ফিসার, লেইং স্টোয়েকল (Fisher, Laing and Stoeckel, 1991) বলেন, “সমস্যা হলো এক ধরনের প্রত্যক্ষিত অসুবিধা, কোন বস্তুর অবস্থানগত কারণে অনুভূত অস্বাচ্ছন্দ্য, কারো প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যকার অসামঞ্জস্যতা।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞা থেকে জানা যায় যে, কোন গবেষণায় নিরপেক্ষ চলের সাথে সাপেক্ষ চলের সম্পর্কের প্রকৃতি জানাটাই হচ্ছে গবেষণায় ব্যবহৃত সমস্যা। এই ধরনের সমস্যা সমাধান করার জন্যই প্রয়োজন হয় গবেষণার। এ গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। তাই গবেষণার ফলাফল সমস্যাটির একটি পরিমাপকৃত ও গ্রহণযোগ্য সমাধান প্রদান করে থাকে।
গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়া : বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। গবেষণার যথাযথ সমস্যা গ্রহণ খুবই প্রয়োজন। কারণ সমস্যাকে ঘিরেই সবসময় গবেষণা পরিচালিত হবে। গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি প্রধানত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়।নিম্নে এই ধাপগুলো আলোচনা করা হলো :
গবেষণা সমস্যার ক্ষেত্রে নির্বাচন : গবেষণার জন্য সমস্যাটির ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে। গবেষণার জন্য সর্বপ্রথম চিন্তাভাবনা করতে হবে। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর কোন ক্ষেত্রের জন্য গবেষণামূলক সমস্যা নির্বাচন ও গ্রহণ করা হবে তা চারটি ধাপে করতে হবে। যেমন-
১. গবেষণার ব্যবহৃত সমস্যাটি প্রচলিত গবেষণাগুলোর সাথে একই ধারাবাহিকতায় আবদ্ধ হলে ভালো হয়।
২.-গবেষণার সমস্যাটি এমন হতে হবে যেন তা গবেষকের আগ্রহের ক্ষেত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়।
৩. গবেষণার সমস্যা সবসময় সুনির্দিষ্ট ও স্বল্প পরিসর হবে। বেশি বা অধিক মাত্রা সম্পর্কযুক্ত সমস্যাকে কখনো গ্রহণ করা উচিত নয়।
৪. বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্র এমন হতে হবে যাতে স্বার্থকভাবে গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব হয়। কারণ গবেষণা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা করা সম্ভব না হলে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না। গবেষণা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করার জন্য গবেষককে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। তাই আর্থিক সংগতি, যন্ত্রপাতির সহজ প্রাপ্যতা ও উপাদানগুলোর সহজলভ্যতা বিবেচনা করেই সমস্যা নির্বাচন করা উচিত।
খ. সমস্যা শনাক্তকরণ : গবেষণা সমস্যার ক্ষেত্রে সমস্যা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপ হলো সমস্যা শনাক্তকরণ।সমস্যা শনাক্তকরণ করে কাজ করলে কাজটি অনেক সহজ হয়।কেননা এই সমস্যা শনাক্তকরণ অত্যন্ত জটিল বিষয়।গবেষণাকে সার্থক ও সুন্দর করতে হলে প্রথমে সমস্যাটিকে ভালোভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে পারলে গবেষণা সহজ হবে। তাই সমস্যা নির্বাচনের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে। অনেকগুলো সমস্যার সাথে এই সমস্যাকে তুলনা করে সঠিক সমস্যা সনাক্ত করতে হবে। সঠিক সমস্যা শনাক্ত করতে হলে দুটি দিকের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। একটি হলো বাহ্যিক শর্ত এবং অপরটি হলো অভ্যন্তরীণ শর্ত। বাহ্যিক শর্তগুলো হলো সমস্যার নতুনত্ব, সমস্যার তাৎপর্য, সমস্যার উৎস, সমস্যার সংশ্লিষ্ট কৌশল, স্পনসরশিপ এবং কাজ করার পরিবেশ ও শর্ত। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ শর্তগুলো হলো গবেষকের আগ্রহ, বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থা, গবেষণা পরিচালনার দক্ষতা, ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যাবলি, আর্থিক খরচের সামর্থ্য, ব্যক্তিগত ঝুঁকি, সময়সূচি এবং প্রেষণা।
গ. সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ : গবেষণায় সমস্যা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশেষ ধাপ হলো সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ। এখানে যত রকমের বা প্রকারের সমস্যা আছে সবগুলো সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়। সমস্যা
সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনাই এখানে অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- উপ সমস্যা, সাহিত্য, তথ্য, উৎস পরিসর ইত্যাদির উপর আলোচনা ও বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।যাতে করে সর্বসম্মতভাবে সমস্যাটিকে গ্রহণ করা সম্ভব হয়। সমস্যাটিকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে কতকগুলো প্রশ্নকে বিবেচনা করতে হয়। যেমন- আমরা কী জানতে চাই? কোথায় ও কিভাবে আমরা তা লাভ করব? কে এই তথ্যসংগ্রহ করবেন? কিভাবে এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা হবে? এর অর্থ কি হবে?
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গবেষণার সমস্যায় গবেষণাটিকে সার্থক করে তুলতে হলে সমস্যা নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে সমস্যা নির্ধারণ করে
গবেষণা পরিচালনা করলে গবেষণা সার্থক হবে। সুতরাং মনোবিজ্ঞানে সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি যদিও অত্যন্ত জটিল তারপরও এদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।