গণতন্ত্র (Democracy) হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে। সহজ কথায়, এটি “জনগণের শাসন”। গ্রিক শব্দ “ডেমোস” (dēmos) যার অর্থ জনগণ এবং “ক্রাটোস” (kratos) যার অর্থ শাসন বা ক্ষমতা, এই দুটি শব্দ থেকে “গণতন্ত্র” শব্দটি এসেছে।
গণতন্ত্রে, প্রতিটি নাগরিকের নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমান ভোট বা অধিকার থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের একটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা অনুযায়ী, “গণতন্ত্র হল জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সরকার।”
গণতন্ত্রের মূলনীতি
গণতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি রয়েছে যা একে অন্যান্য শাসনব্যবস্থা থেকে আলাদা করে:
- জনগণের সার্বভৌমত্ব: গণতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী এবং তাদের সম্মতিতেই সরকার পরিচালিত হয়।
- রাজনৈতিক সমতা: প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমান অধিকার থাকে, যেমন ভোট দেওয়া, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং মতামত প্রকাশ করা।
- আইনের শাসন: সমাজের সকল স্তরে আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হয় এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
- মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা: নাগরিকদের মতপ্রকাশ, সমাবেশ, সংগঠন তৈরি, ধর্ম পালন ইত্যাদি মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকে।
- নিয়মিত ও অবাধ নির্বাচন: নির্দিষ্ট সময় পর পর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে।
- জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা: সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে এবং সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়।
- সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন ও সংখ্যালঘুদের অধিকার: গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই গৃহীত হয়, তবে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বার্থও সুরক্ষিত রাখা হয়।
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ থেকে স্বাধীন থাকে যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
গণতন্ত্রের প্রকারভেদ
গণতন্ত্র মূলত দুই প্রকারের হতে পারে:
- প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র (Direct Democracy): এই পদ্ধতিতে জনগণ সরাসরি নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলিতে এর উদাহরণ দেখা যায়, যেখানে নাগরিকরা একত্রিত হয়ে আইন প্রণয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিত। আধুনিক বিশ্বে বড় পরিসরে এটি প্রায় অসম্ভব হলেও, ছোট স্থানীয় পর্যায়ে বা গণভোটে এর ব্যবহার দেখা যায়।
- পরোক্ষ গণতন্ত্র বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র (Representative Democracy): এই পদ্ধতিতে জনগণ সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনা না করে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করে। এই প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই এই পদ্ধতি প্রচলিত।
গণতন্ত্র একটি বিকশিত ধারণা এবং সময়ের সাথে সাথে এর প্রয়োগ ও সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। তবে, এর মূল লক্ষ্য সবসময়ই জনগণের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।