খুদি তত্ত্ব কী?

অথবা, ইকবালের খুদিতত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ইকবালের খুদিতত্ত্বের ধারণা দাও।
অথবা, খুদি তত্ত্বে ইকবাল কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, ইকবালের খুদিতত্ত্ব কী?
উত্তর৷৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে যে কয়েকজন উপমহাদেশীয় দার্শনিকের নাম জানা যায় আল্লামা ইকবাল (১৮৭৩ – ১৯৩৮) তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মুসলিম দর্শনে প্রাচ্যের অধ্যাত্মবাদ ও পাশ্চাত্যের বস্তুবাদের
সমন্বয়সাধন করেন। তিনি তাঁর জ্ঞান ও কর্মের মাধ্যমে উপমহাদেশের মুসলমান জাতিকে নবজাগরণের পথনির্দেশ করে গেছেন । তিনি যে দার্শনিক আলোচনা করেছেন তার মধ্যে ‘খুদি তত্ত্ব’ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
ইকবালের খুদিতত্ত্ব : খুদি ফার্সি শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো অহং। ইকবালের দর্শনের বিশেষ দিক হলো খুদিতত্ত্ব। তিনি খুদি বলতে আত্মা বা আত্মসত্তাকে নির্দেশ করেন। বলা যায় যে, তার খুদিতত্ত্বকে কেন্দ্র করে তার সমগ্র দর্শন চিন্তা আবর্তিত হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
খুদি বাস্তব : ইকবালের মতে, খুদি কোন অবাস্তব সত্তা নয়, এটি বাস্তব। কেননা, এটি তার নিজস্ব শক্তির উপর ভিত্তি করে অস্তিত্বশীল রয়েছে। তিনি মনে করেন যে, বস্তু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে অস্বীকার করা যায় না। যেমন আমরা জগতে যে অস্তিত্বশীল তাকে অস্বীকার করতে পারি না। খুদি বা অহং এর অস্তিত্বকে সর্বখোদাবাদীরা একেবারে উড়িয়ে
দিতে পারে না। বাস্তব জগতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে সর্বখোদাবাদীরা ব্যর্থ হয়েছেন। কেননা, জগতের অস্তিত্বকে প্রমাণের জন্য দু’টি বিকল্প হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। যথা : ১. জগৎ খোদা হতে নিঃসৃত এবং ২. জগৎ খোদার প্রকাশ। কিন্তু সর্বখোদাবাদীরা জগৎকে সেভাবে দেখেন না।
সর্বখোদাবাদের সমালোচনা : ইকবাল প্রথমে সর্বখোদাবাদ দ্বারা প্রভাবিত হলেও খুব শীঘ্র এটি হতে বের হয়ে আসেন। তিনি বলেছেন, সংবেদনজাত ও প্রত্যক্ষণজাত জ্ঞানকে আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারি
না। যদিও তারা জগতের স্বতন্ত্র সত্তাকে অস্বীকার করেন, তবুও তারা এর মাধ্যমে নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না।
খুদিকে জানার উপায় : খুদিকে জানতে হলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন পথকে গ্রহণ করলে চলবে না। খুদিকে জানতে হলে যে স্বজ্ঞা প্রয়োজন তার মধ্যে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার স্থান নেই।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত দার্শনিক হিসেবে তার খুদি দর্শন ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের ‘ভাব জনক’ হিসেবে পরিচিত। তার ‘আসরার ই-খুদি’ এর মাধ্যমে দার্শনিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।