অথবা, কেইস/কেস রেকর্ডিং বলতে কী বুঝ? রেকর্ডিং বা লিপিবদ্ধ করার বিষয়সমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, কেস লিপিবদ্ধকরণ কী? কেস লিপিবদ্ধকরণের উপায়সমূহ আলোচনা কর।
অথবা, রেকডিং কী? রেকডিং এর উপায়সমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ব্যক্তি সমাজকর্মে সমাজকর্মীর একটি অন্যতম দায়িত্ব হলো রিপোর্ট ও নথি লিপিবদ্ধকরণ।
কেইস লিপিবদ্ধকরণ/ কেইস সংরক্ষণ তথ্যকে সুবিন্যাস করতে সাহায্য করে।
কেইস লিপিবদ্ধকরণ/ কেইস সংরক্ষণ/কেস রেকর্ডিং : সমাজকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, তার জীবন ইতিহাস, আর্থসামাজিক অবস্থা, পারিবারিক অবস্থা, তার সমস্যা, সমস্যার কারণ, সমস্যার প্রকৃতি, ব্যক্তির প্রাপ্ত সুবিধা,তার বর্তমান ও পূর্ববর্তী অবস্থা, বিশেষ ঘটনা ইত্যাদি তথ্যাবলি ধারাবাহিকভাবে লেখাকে লিপিবদ্ধকরণ বা Case recording বলে। ব্যক্তি সমাজকর্মে কেস লিপিবদ্ধকরণের ধরন ব্যক্তি ও তার সমস্যাভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
প্রামান্য সংজ্ঞা : Dictionary of Social Work এর সংজ্ঞানুযায়ী, “Recording in social work the process to putting in writing and keeping on file relevant information about the client, the a problem, the prognosis, the intervention plan, the progress of treatment, the social, economic and health factors that contribute to the situation and the procedures for termination or referral.”
সৈয়দ শওকতুজ্জামান (২০০৫: ১২৮) বলেন, “সমাজকর্ম অনুশীলনে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, তার সমস্যা, সেবা প্রদান ও সেবা সুবিধার সফলতা বিফলতা বিষয়ে ধারাবাহিক তথ্যাবলি বিন্যস্তভাবে লিখে রাখাকে কেস লিপিবদ্ধকরণ (Case
recording) বলা হয়।উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে আমরা বলতে পারি, সাহায্যার্থী ব্যক্তি ও তার সমস্যা, তার আর্থসামাজিক, পারিবারিক ও মনোদৈহিক অবস্থা, তার সেবা প্রাপ্তি, তার মনোভাব, তার বর্তমান অবস্থা, পূর্বেকার অবস্থা, বিশেষ কোন ঘটনা, তার সমস্যার প্রকৃতি ইত্যাদি ধারাবাহিক ও বিন্যস্তভাবে লিখে রাখা বা নথিভুক্ত করাকে লিপিবদ্ধকরণ বলে।
কেইস লিপিবদ্ধকরণ/ কেইস সংরক্ষণ- এ যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করতে হয় কেইস লিপিবদ্ধকরণ/ কেইস সংরক্ষণ- এ যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করতে হয় সেগুলো হলো :
ব্যক্তিগত পরিচিতি
কেস গ্রহণের যৌক্তিকতা: কেস লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে কেইস গ্রহণের যৌক্তিকতাও তুলে ধরতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির বিশেষ কোন দিক যেমন- তার ভীষণ অসহায়ত্ব, তার দুষ্টুমি, তার ভিন্ন প্রকৃতির চালচলন, তার কোমলমতি স্বভাব ইত্যাদি কেস গ্রহণের যৌক্তিকতা হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হয়। মোটকথা, কেন একজন সমাজকর্মী অনেকগুলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি থেকে একজনকে তার কেইস হিসেবে গ্রহণ করবে সে যৌক্তিকতাই এখানে তুলে ধরতে হয়।
নিম্নে সংক্ষেপে কেস রেকর্ডিং বা লিপিবদ্ধ করার বিষয়সমূহ আলোচনা করা হলো
১. সাহায্যার্থীকে শনাক্তকরণের তথ্যাবলি : কেস লিপিবদ্ধকরণ বা রেকর্ডিং এর ক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে সর্বপ্রথম সাহায্যার্থীকে শনাক্তকরণের তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ করতে হবে। সাহায্যার্থীকে শনাক্তকরণের মধ্যে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকবে তা হলো :
২. সাক্ষাৎপ্রার্থীর আর্থিক অবস্থা : সাহায্যার্থীর আর্থিক অবস্থা জানতে হবে। এ সম্পর্কে তার যে বিষয়গুলো জানতে হবে তা হলো :
৩. পারিবারিক অবস্থা : সাহায্যার্থীকে সাহায্য করার লক্ষ্যে তার পরিবার সম্পর্কিত তথ্যাবলিও দরকার। পরিবারের যেসব বিষয়ে তথ্য দরকার তা বিভিন্ন আঙ্গিকে ছকের মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে-
ক. পরিবারের সদস্য সম্পর্কিত তথ্য ঃ
খ. সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা;
গ. সদস্যদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তাদের নাম;
ঘ. সদস্যদের মধ্যে কেউ ধর্মচর্চা করলে তার নাম;
ঙ. পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য :
৪. পারিবারিক বিনোদন : এক্ষেত্রে যেসব তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে তা হলো :
ক. পরিবার কি ধরনের বিনোদন পছন্দ করে;
খ. পরিবারে টিভি, সিডি প্লেয়ার কিংবা ডিভিডি প্লেয়ার আছে কি না;
গ. পরিবারে রেডিও আছে কি না;
ঘ. গান শিক্ষা হয় কি না অথবা;
ঙ. কোন বিনোদনেরই ব্যবস্থা আছে কি না।
৫. অন্যান্য তথ্য : এক্ষেত্রে পরিবারের ধরন বুঝে অনেক তথ্যই লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। যেমন-
ক. পরিবার ভগ্ন না স্বাভাবিক;
খ. সাহায্যার্থীর পিতামাতা জীবিত না মৃত;
গ. পরিবারে প্রতিবন্ধী আছে কি না;
ঘ. পরিবারে কেউ মাদকাসক্ত কিংবা অপরাধী আছে কি না;
ঙ. পিতা বা মাতা ডিভোর্সী কিংবা পুনরায় বিবাহপ্রাপ্ত কি না ইত্যাদি ।
৬. সাহায্যার্থী সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য : সাহায্যার্থী সম্পর্কে অন্যান্য যে বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে তা হলো ঃ
ক. সাহায্যার্থী পূর্বে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে গমন করেছিল কি না;
খ. সাহায্যার্থী সম্পর্কিত পূর্ববর্তী ঘটনা;
গ. সাহায্যাথীর সামাজিক মর্যাদা;
ঘ. সমাজে তার অবস্থান;
ঙ. সামাজিক কাজে অবস্থান;
চ. তার অভ্যাস ও মূল্যবোধ;
ছ. এজেন্সি সম্পর্কে সাহায্যার্থীর ধারণা;
জ. সাহায্যার্থীর বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা ও তাদের আচার আচরণ।
৭. সাহায্যার্থীর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ : সাহায্যার্থীর নিম্নোক্ত সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলোও লিপিবদ্ধ করতে হবে ঃ
ক. সাহায্যার্থী কোন সাংস্কৃতিক সংঘের সদস্য কি না;
খ. সে msMxZ চর্চা করে কি না, করলে কি ধরনের;
গ. কি ধরনের বিনোদন সে উপভোগ করে;
ঘ. বিনোদনে সে কি পরিমাণ সময় ব্যয় করে ইত্যাদি।
৮. সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত : এক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মীকে যেসব তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ করতে হবে তা হলো :
ক. সাহায্যার্থী কিভাবে সমাজকর্মীর শরণাপন্ন হলেন;
খ. সমস্যা সমাধানে তার ইচ্ছাশক্তি কতটুকু;
গ. কর্মী কখন, কোন সময় সাক্ষাৎকারের উদ্যোগ নেন;
ঘ. সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে তার সমস্যা সমাধানে কি ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন;
ঙ. সাহায্যার্থী এজেন্সির কাছ থেকে কি ধরনের সাহায্যের প্রত্যাশা করে।
৯. সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া : এক্ষেত্রে ব্যক্তির যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করতে হবে তা হলো :
ক. সাক্ষাৎকারে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় ও পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া;
খ. সাহায্যার্থীর নিজ ভাষায় ব্যক্ত কোন অভিমত;
গ. ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিশেষ ভাবভঙ্গি;
ঘ. লক্ষণীয় কোন আকস্মিক পরিবর্তন;
ঙ. আলোচনার ধারাবাহিকতায় সাহায্যার্থীর আত্মরক্ষা বা উদাসীনতা, লক্ষ্যহীনতা ইত্যাদি।
১০. বিবিধ : সাহায্যার্থী সম্পর্কে আরো যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন সেগুলো হচেQN
ক. সাক্ষাৎকার চলাকালীন যেসব ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে মূল্যায়ন বিবরণী;
খ. কিছু প্রশ্ন, কিছু ব্যাখ্যা, ঘটনার পিছনের ঘটনা ইত্যাদি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি,নথি লিপিবদ্ধকরণের অনেকগুলো বিষয় আছে।এগুলো সমাজকর্মীকে সচেতনতার সাথে লিপিবদ্ধ করতে হয়। তথ্যের সঠিকতা যাচাইপূর্বক সমাজকর্মীকে তা লিপিবদ্ধ করতে হয়। সাহায্যার্থীর ব্যক্তিত্ব ও তার সমস্যার প্রকৃতির উপর লিপিবদ্ধকরণের বিষয়বস্তু কিছুটা আলাদা হতে পারে।একজন সমাজকর্মী সাক্ষাৎকার চলাকালীন যেমন ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে পারেন তেমনি সাক্ষাৎকারের পরেও করতে পারেন। তবে সাক্ষাৎকার চলাকালীন সবগুলো বিষয় খুঁটিনাটি লিপিবদ্ধ না করাই ভালো। এতে সাহায্যার্থীর মনে এমন ধরনের প্রশ্নের উদয় হতে পারে যে, সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর বক্তব্য আন্তরিকতার সাথে শ্রবণ করছে না।