অথবা, কেন্দ্রীয় প্রবণতার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, কেন্দ্ৰীয় প্রবণতার তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিসংখ্যানের অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহকে গণসংখ্যা নিবেশনে উপস্থাপন করলে দেখা যায় অধিকাংশ উপাত্ত নিবেশনের মাঝামাঝি একটি বিশেষ সংখ্যা মানের দিকে একত্রিত অবস্থায় অবস্থান করছে। এ বিশেষ সংখ্যাটিকে কেন্দ্রীয় মান বলা হয়। এ কেন্দ্রীয় মানের দিকে অন্যান্য সংখ্যার বা রাশির ঘনীভূত হওয়ার প্রবণতা বা
ঝোঁককে কেন্দ্ৰীয় প্রবণতা বলে । এতে নিবেশনের মধ্যবর্তী কোনো রাশির গণসংখ্যা অধিক ঘনীভূত হয় এবং উক্ত রাশির প্রথম ও শেষ দিকে গণসংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।
কেন্দ্রীয় প্রবণতার গুরুত্ব : তথ্য বিশ্লেষণে কেন্দ্রীয় প্রবণতার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। নিম্নে কেন্দ্রীয় প্রবণতার গুরুত্বসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. একক সংখ্যা নির্ণয় : একটি গণসংখ্যা নিবেশনের তথ্যাদিকে বিশ্লেষণ ও তুলনা উপযোগী করে তুলতে হলে তথ্যাদিকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। তার জন্য আমাদের প্রথম ও প্রয়োজনীয় কাজ হলো একক সংখ্যা নির্ণয় করা।
২. তুলনা : এটি দুই বা ততোধিক তথ্যমালার মধ্যে অতি অল্প সময়ে তুলনার পথ সুগম করে দেয়। কোনো এক সময়ের বা কোনো এক স্থানের একাধিক শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে খুব সহজেই জানা সম্ভবপর হয়।
৩. তথ্য বিশ্লেষণ : পরিসংখ্যানিক তথ্য বিশ্লেষণে এটির গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় গড় সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এককথায়, যে কোন পরিসংখ্যানিক তথ্য বিশ্লেষণে গড় ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পরবর্তী বিশ্লেষণে এটা তথ্যের মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৪. তথ্যসারির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান : কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের মাধ্যমে কোনো তথ্যসারির প্রতিনিধিত্বকারী একক সংখ্যামান নির্ণয় করা হয়। যার ফলে তথ্যসারির সকল তথ্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সহজে ধারণা লাভ করা যায়। যেমন- কোনো গ্রামের সকল মানুষের আয় জানা সম্ভব হয় না, কিন্তু তাদের আয়ের গড় জানা থাকলে গ্রামের সকল মানুষের আয় সম্পর্কে পুরোপুরি একপ্রকার ধারণা লাভ করা যায়। তাছাড়া কেন্দ্রীয় প্রবণতা প্রতিনিধিত্বকারী একক সংখ্যা নির্ণয় করে থাকে।
৫. সমগ্রক সম্পর্কে ধারণা লাভ : এর মাধ্যমে কোনো সমগ্রক সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। সমগ্রকের নমুনা গড় নির্ণয় করে ঐ সমগ্রক সম্পর্কে মন্তব্য করা যায় কেন্দ্রীয় প্রবণতার মাধ্যমে। কারণ নমুনা সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ।
৬. সম্পর্ক নির্ণয় : গবেষণা কর্মে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে নানাবিধ সম্পর্ক নির্ণয় করা দরকার হয়। বিশেষকরে পরিসাংখ্যিক দিক থেকে তুলনামূলক সম্পর্ক নির্ণয় করা অত্যন্ত প্রয়োজন; তাই এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রবণতার গুরুত্ব অপরিসীম।
৭. সামগ্রিকভাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে : সমাজের পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষকরে ব্যবসায়-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়, আয়ব্যয়ের হিসাবনিকাশ করতে কেন্দ্রীয় প্রবণতার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সর্বোপরি মধ্যক মানসমূহের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই একে গড়ের বিজ্ঞান বলা হয় । নিত্যদিনের সামাজিক, অর্থনৈতিক সংক্রান্ত সকল প্রকার সম্পর্ক নির্ণয়ে কেন্দ্রীয় প্রবণতার প্রয়োজন দেখা দেয়।
.