উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে বার ভূঁইয়াদের আবির্ভাব ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তীকাল হতে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। আলোচ্য সময়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে তারাই বারোভূঁইয়া। মুঘলদের কবল হতে বঙ্গদেশকে মুক্ত রাখার জন্য যেসব মুসলমান ও হিন্দু জমিদারের সংগ্রাম স্মরণীয় হয়ে আছে তাদের মধ্যে ঈসা খান, মুসা খান, রাজা প্রতাপাদিত্য, কেদার রায় প্রমুখ নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। নিম্নে কেদার রায়ের পরিচয় তুলে ধরা হলো :
রায় ও কেদার রায়ের পরিচয় : শ্রীপুরের জমিদারির সাথে চাঁদ কেদার রায় এ দুই ভ্রাতাই জড়িত। চাঁদ রায় জ্যেষ্ঠ ছিলেন। কথিত আছে যে, তারা কর্নাট থেকে আগত নিম রায়ের বংশধর। মুঘলদের রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময়ে তারা শ্রীপুরে রাজধানী স্থাপন করে জমিদারি ও শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। ভূঁইয়া হিসেবে চাঁদ রায় অপেক্ষা কেদার রায় বীরত্ব ও শাসনকার্যে অধিকতর যোগ্য ছিলেন। একারণে অধিকাংশ
ইতিহাসকার তাদের বর্ণনায় কেবলমাত্র কেদার রায়কেই ভূঁইয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঢাকা জেলার বিক্রমপুর ও ফরিদপুরের একাংশে চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের জমিদারি ছিল। রাজধানী ছিল শ্রীপুর। কেদার রায়ের সমর্থক ছিল মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুগণ। তিনি বহু বহু পর্তুগিজ জলদস্যুকেও তার সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ বীর ও সুদক্ষ
সামরিক সংগঠক। ১৬০৪ সালে মুঘল সুবাদার মানসিংহ কেদার রায়কে বিক্রমপুরের নিকট সংঘটিত যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দি করেন। এ অবস্থায় সম্ভবত তার মৃত্যু হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার বারো : ভূঁইয়াদের ইতিহাসে কেদার রায় একটি উল্লেখযোগ্য নাম। মোট কথা, বার ভূঁইয়াগণ মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম
করে তা এদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শেষ পর্যন্ত মুঘলদের কাছে পরাজিত হলেও তারা যে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়।