কৃতি অভীক্ষা (Achievement Test)
কৃতি অভীক্ষা হলো এমন এক ধরনের মূল্যায়ন যা একজন ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা দক্ষতা অর্জনের স্তর পরিমাপ করে। সহজ কথায়, এটি “যা শেখা হয়েছে তা কতটা শেখা হয়েছে” তা যাচাই করে। এই অভীক্ষাগুলো সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম, প্রশিক্ষণ, বা অভিজ্ঞতার শেষে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বোধগম্যতা, প্রয়োগ, এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কৃতি অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য
কৃতি অভীক্ষার কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:
- নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু: এই অভীক্ষাগুলো একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম বা বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যেমন, গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, বা কোনো বিশেষ প্রযুক্তিগত দক্ষতা।
- অতীতের শিখন: এটি পূর্ববর্তী শিখন অভিজ্ঞতার ফলাফল পরিমাপ করে, কোনো নতুন বা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পূর্বাভাস দেয় না।
- মানসম্মত: কৃতি অভীক্ষাগুলো সাধারণত মানসম্মতভাবে তৈরি করা হয়, যার ফলে বিভিন্ন শিক্ষার্থী বা গোষ্ঠীর কর্মক্ষমতা তুলনা করা সহজ হয়।
- উদ্দেশ্য: এর মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর শিখন কতটা কার্যকর হয়েছে তা নির্ণয় করা এবং প্রয়োজনে শিখন প্রক্রিয়ায় উন্নতির জন্য ফিডব্যাক প্রদান করা।
কৃতি অভীক্ষার প্রকারভেদ
কৃতি অভীক্ষা বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে:
প্রস্তুত প্রণালী অনুসারে:
- প্রস্তুতকারকের ভিত্তিতে:
- শিক্ষক-নির্মিত অভীক্ষা (Teacher-made tests): এগুলো শিক্ষকরা তাদের নির্দিষ্ট শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনে তৈরি করেন।
- প্রামাণ্য অভীক্ষা (Standardized tests): এগুলো বিশেষজ্ঞ দ্বারা তৈরি, যা ব্যাপক গবেষণা ও পরীক্ষণের পর প্রমিত করা হয়। যেমন, SAT, GRE, বা বিভিন্ন বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষা।
ধরন অনুসারে:
- মৌখিক অভীক্ষা (Oral tests): প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তাৎক্ষণিক উত্তর নেওয়া হয়।
- লিখিত অভীক্ষা (Written tests): এতে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ), সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন, রচনামূলক প্রশ্ন ইত্যাদি থাকতে পারে।
- ব্যবহারিক অভীক্ষা (Practical tests): এটি কোনো দক্ষতা বা কৌশল সরাসরি প্রয়োগের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে। যেমন, ল্যাব পরীক্ষা, বা কোনো যন্ত্র পরিচালনা।
উদ্দেশ্য অনুসারে:
- গঠনমূলক অভীক্ষা (Formative tests): শিখন প্রক্রিয়ার চলাকালীন গঠনমূলক ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
- সার্বিক অভীক্ষা (Summative tests): এটি একটি নির্দিষ্ট সময় বা কোর্স শেষে শিক্ষার্থীর সার্বিক অর্জন পরিমাপ করে।
কৃতি অভীক্ষার গুরুত্ব
কৃতি অভীক্ষা বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
- শিক্ষার্থীর অগ্রগতি মূল্যায়ন: শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখতে পেরেছে, তা জানতে সাহায্য করে।
- পাঠ্যক্রমের কার্যকারিতা: কোনো পাঠ্যক্রম বা শিক্ষণ পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করতে এটি সহায়ক।
- শিক্ষকদের জন্য নির্দেশিকা: শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে শিক্ষকদের তাদের শিক্ষণ পদ্ধতি উন্নত করতে সাহায্য করে।
- ভবিষ্যৎ নির্দেশনা: শিক্ষার্থীদের তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা বা পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিতে পারে।
- প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক মানের একটি চিত্র তুলে ধরে।
সংক্ষেপে, কৃতি অভীক্ষা হলো একটি অপরিহার্য হাতিয়ার যা শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে।