অথবা, মুতাজিলারা কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে কী বলেন?
অথবা, মুতাজিলারা কী কুরআনের নিত্যতা স্বীকার করেন?
অথবা, মুতাজিলারা কুরআনের নিত্যতাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেন?
অথবা, মুতাজিলাদের মতে কুরআনের নিত্যতা কিরূপ?
উত্তর৷ ভূমিকা : মুতাজিলারা ইসলামের প্রথম সম্প্রদায়, যারা ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে দার্শনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এই সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে প্রথম হিজরির শেষ ভাগে। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল
পুরোপুরি বুদ্ধিভিত্তিক । তারা বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যাদেশ নির্ভর সব কিছুর নিষ্পত্তি হতে হবে তাত্ত্বিক বুদ্ধির মাধ্যমে। তাই মুতাজিলারা ইসলামি বুদ্ধিবাদী গোষ্ঠী নামে বিবেচিত।
মুতাজিলা কারা : মুতাজিলা শব্দের অর্থ দল ত্যাগকারী। কাদারিয়া চেতনা নিয়ে এবং খারিজিদের উগ্র ধর্মান্ধতা ও ধর্ম শিথিল মুরজিয়াদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মুতাজিলাগণই প্রথমে ইসলামে স্বাধীন চিন্তাধারার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন । মনীষী ওয়াসিল বিন আতা এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি ছিলেন মনীষী হাসান আল বসীর শিষ্য।
কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে মুতাজিলাদের মত : সাধারণ মুসমানেরা বিশ্বাস করে যে, কুরআন একটি প্রত্যাদেশ। পবিত্র কুরআনে এ কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন যে আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে মহানবী (স) ও
সে কথা বলেছেন। কুরআনকে ‘উম্মুল কিতাব’ও বলা হয়। মুতাজিলা চিন্তাবিদগণ যে যুক্তিতে আল্লাহর গুণাবলিকে অস্বীকার করেছেন, কুরআনের নিত্যতাকেও সেই একই যুক্তিতে অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি। এটা জিব্রাইল (স) এর উপর অবতীর্ণ এক ঐশী গ্রন্থ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই এটা মহান প্রতিপালকের সৃষ্টি, যা জিব্রাইল ফেরেস্তার মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে।” মুতাজিলারা যুক্তি দেখান যে, কুরআনের নিত্যতাকে যদি স্বীকার করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর একত্ব সম্পর্কীয় কুরআনের মূলনীতি হয়ে পড়ে। আল্লাহ্ যদি এক ও অদ্বিতীয় হন, তাহলে তাঁর পাশাপাশি অন্য কোন জিনিস নিত্য হতে পারে না। কুরআনের নিত্যতা এ কথার ইঙ্গিত প্রদান করে যে, আল্লাহর সঙ্গে সহ-নিত্য হিসেবে এটারও অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু এটা আল্লাহর একত্বের ধারণার পরিপন্থি। তাই কুরআনের নিত্যতার ধারণার প্রতি বিশ্বাস শিরক বা পৌত্তলিকতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে এবং তা আল্লাহর একত্বের ধারণাকে কলুষিত করে। সুতরাং মুতাজিলারা এ মত পোষণ করেন যে,
এক বিশেষ সময়ে কুরআন সৃষ্ট ও শব্দে প্রকাশিত এবং তা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাজিলারা যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রচলিত মতকে অস্বীকার করে তাদের নিজেদের মত উপস্থাপন করেন। তারা যুক্তির সাহায্যে কুরআনের নিত্যতার ধারণাকে অস্বীকার করে আল্লাহর একত্বের ধারণাকে রক্ষা করেন। সুতরাং মুতাজিলাদের মতে, পুণ্যত্মারা আল্লাহর দর্শন দ্বারা পুরস্কৃত হবেন বলে কুরআনে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তাকে গ্রহণ করতে হবে রূপক অর্থে, আক্ষরিক অর্থে নয়।