কিভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
অথবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পন্থাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : জনসংখ্যা যে কোন দেশের জন্যই এক মহামূল্যবান সম্পদ। উৎপাদনের যে চারটি উপকরণ ভূমি,
মূলধন, শ্রমিক এবং সংগঠন রয়েছে তার তিনটিই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আসে জনসংখ্যা থেকে। জনসংখ্যা আমাদের অমূল্য
সম্পদ। তবে অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা আবার সকল অশান্তির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে জনসংখ্যার বিশালায়তনের
কারণে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে তৈরি হচ্ছে নানান সামাজিক সমস্যা। তাই জনসংখ্যা আমাদের জাতীয় জীবনে
.এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশে প্রকট থেকে প্রকটতর আকার ধারণ করেছে। এত বিশাল জনসংখ্যার কারণে কোনো প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। এ বিশাল মানবগোষ্ঠীর মুখে আহার তুলে দিতে গিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এ ভয়ঙ্কর সমস্যাটি সমাধান বা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে আমাদের
ভবিষ্যৎ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই এর আশু নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে করণীয় গৃহীত পদক্ষেপ : নিম্নে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে করণীয়গুলো আলোচনা
করা হলো :কোটি ৬৯ চিকিৎসা,
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে হবে : উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১% এর কম সেখানে আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রায় ২% থাকছে। ১৯৬১ সালে যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৫.০৮ কোটি এখন সেখানে ১৪ লক্ষে এসে অর্থাৎ, প্রায় তিন গুণের কম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদক বাসস্থানের হচ্ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জনগণের মৌলিক চাহিদা আদৌ মিটান সম্ভব হবে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার, ১.৩২% কে কমিয়ে ১% এর নিচে আনতে হবে সেক্ষেত্রে নিম্নের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে : পৌঁছেছে। সংকুলান
ক. দারিদ্র্য হ্রাস : দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি। “দারিদ্র্য এবং সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা একই সাথে অবস্থান করে।” সুতরাং, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য দারিদ্র্য কমাতে হবে।
খ. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন : বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিচু। দেশের বৃহৎ স্বার্থে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে হবে।
গ. নারী শিক্ষার বৃদ্ধি : নারী শিক্ষিত হলে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কম সন্তান জন্মদান করবে। সুতরাং, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। এতে করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমবে।
২. বাল্যবিবাহ রোধ : আমাদের দেশে এখনো ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে বিবাহের ন্যুনতম বয়স ২১ ও ১৮ বছর বয়সকে উপেক্ষা করে বিবাহ সম্পন্ন করা হচ্ছে, যা বাল্যবিবাহের নামান্তর। তাছাড়া বাল্যবিবাহের সাথে অধিক সন্তান জন্মদানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আইনের কড়াকড়ি প্রয়োজন করে বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে।
৩. বহুবিবাহ রোধ : জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির পশ্চাতে বহুবিবাহ অনেকাংশে দায়ী। বহুবিবাহের ফলে জন্মহার বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রেও আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ করে বহুবিবাহ রোধ করতে হবে।
৪. শিক্ষার প্রসার : শিক্ষার প্রসার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করলে সাধারণত বেশি বয়সে বিয়ে করে। তদুপরি, শিক্ষিত লোকেরা উন্নত জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকে বলে অধিক সন্তানে আগ্রহী হয় না। এতে করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হবে।
৫. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে বেকারত্ব কমবে। বেকারত্বের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. মহিলাদের কর্মসংস্থান : মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে অধিক হারে মহিলাদের ঘরের বাইরের কাজে নিয়োজিত করতে পারলে দেশে জন্মহার হ্রাস পাবে। তাছাড়া, কর্মজীবী মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা
তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাতৃত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। এতে করে জন্মহার কমবে। বলে
৭. পরিবার পরিকল্পনা : পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে সবচেয়ে কার্যকরভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পরিবার
পরিকল্পনার ফলে মানুষের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বাড়ে। এর ফলে জন্মহার কমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হয়।
বিশ্বের অনেক দেশে পরিবার পরিকল্পনা জনপ্রিয়তার মুখ দেখলে আমাদের দেশে খুব ভালোভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
সুতরাং, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনাকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে।
৮. সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার রোধ : আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার বিদ্যমান্যরয়েছে। শিক্ষার অভাবে অধিকাংশ লোক অদৃষ্টবাদী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পাপের কাজ বলে মনে করে, ফলে পরিবার পরিকল্পনা ভালোভাবে কাজ করতে পারছে না। এ উপলক্ষ্যে আমাদের গণসচেতনতা বৃদ্ধির সামাজিক
আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
৯. চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে চিত্তবিনোদন ও অন্যান্য সামাজিক সুযোগ সুবিধার বিশেষ অভাব রয়েছে। চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত লোকদের মধ্যে জৈবিক তাড়না অত্যন্ত প্রবল। মাত্রাতিরিক্ত জৈবিক তাড়নার প্রভাবে জন্মহার বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অধিক হারে চিত্তবিনোদনের সুযোগ
সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।১০. বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা : বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমে জনসংখ্যানিয়ন্ত্রণ হবে। আমাদের দেশে নির্ভরশীলতার হার অত্যন্ত বেশি। বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার অভাবে পুত্রসন্তানগণের উপর নির্ভরশীল
হওয়ার আশায় আমাদের দেশের মানুষ অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে। সুতরাং, সরকারকে বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা
বিধান করতে হবে, তাহলে জন্মহার কিছুটা হ্রাস পাবে।
১১. নারীর ক্ষমতায়ন : আমাদের নারী সমাজের সিংহভাগ ঘরের বাইরে গিয়ে উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করে না। ফলে
তারা পরিবারের জন্য আয় উপার্জনে অক্ষম। ফলশ্রুতিতে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তাদের মর্যাদা কম। ফলে অনেক সময়
তাদের মতের উপর মাতৃত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা যে কোনো দেশের জন্য হুমকীস্বরূপ। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি জনবিস্ফোরণে পরিণত হয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে এখনই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন সরকারের যথাযথ হস্তক্ষেপ।