অথবা, কর্ম সন্তুষ্টি বৃদ্ধির উপায়গুলো কী কী?
উত্তর: ভূমিকা: একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টি নিঃসন্দেহে ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। চাকরির সন্তুষ্টি এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। তাই এ ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় না। অধিকন্তু, কর্মচারী কাজের সন্তুষ্টি প্রেরণা এবং মনোবলের সাথে সম্পর্কিত একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ ব্যবস্থাপনাকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কাজের সন্তুষ্টি বাড়ানোর উপায়: চাকরির সন্তুষ্টি বাড়ানোর সম্ভাব্য উপায়গুলি নিম্নরূপ:
১. ন্যায্য পারিশ্রমিক: প্রত্যেক শ্রমিক কাজের জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক আশা করে। ন্যায্য মজুরি-বেতন কাঠামোর অধীনে যথাযথভাবে কর্মচারীদের পারিশ্রমিক কর্মীদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করবে।
২. কাজের স্বীকৃতি: প্রতিটি মানুষই স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে। একজন কর্মী তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতি পেলে নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হবেন। এই ধরনের প্রেরণা কর্মীকে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে এবং তার কাজের সন্তুষ্টি বাড়ায়।
৩. ন্যায্য কাজের পরিবেশ: কর্মচারীরা একটি ন্যায্য এবং সুন্দর কাজের পরিবেশে কাজ করতে অনুপ্রাণিত বোধ করে। প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস, অনুকূল তাপমাত্রা, বিস্তৃত কাজের পরিধি, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সরবরাহ করলে কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালনে বেশি আগ্রহী বোধ করে এবং তাদের কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
৪. চাকরি সমৃদ্ধকরণ: কর্মচারীদের কাজের সন্তুষ্টি বাড়ানোর জন্য চাকরি সমৃদ্ধকরণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কাজের সমৃদ্ধি এমনভাবে একটি চাকরিকে নতুনভাবে ডিজাইন করা জড়িত যা কাজের বৈচিত্র্য তৈরি করে, কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রবর্তন করে এবং কর্মীদের জন্য অর্থপূর্ণ কাজের সুযোগ তৈরি করে।
৫. কাজের নিরাপত্তা: কর্মচারীদের যদি তাদের চাকরি হারানোর ভয় থাকে তবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজে মনোনিবেশ করবে না। চাকরির নিরাপত্তা মানসিক অশান্তি দূর করে এবং কর্মীদের সন্তুষ্টি নিয়ে আসে।
৬. উন্নত তত্ত্বাবধান: তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টির উপর প্রভাব ফেলে। প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান ব্যবস্থার মান উন্নত ও দক্ষ হলে কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে এবং তাদের কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। দুর্বল তত্ত্বাবধান কর্মচারীদের কাজের অসন্তোষের দিকে পরিচালিত করে।
৭. সময়োপযোগী পদোন্নতি: কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মচারী পদোন্নতি আশা করে। এটি কর্মীদের যোগ্যতার একটি প্রশাসনিক স্বীকৃতি। ন্যায্য পদোন্নতির নীতির মাধ্যমে সময়মতো পদোন্নতি পেলে কর্মচারীরা নিঃসন্দেহে সন্তুষ্ট। পদোন্নতি কর্মীদের কাজ এবং সংগঠনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে তোলে।
৮. ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ: ব্যবস্থাপনায় কর্মচারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে কাজের সন্তুষ্টি বাড়ানো যেতে পারে। যদি কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে তবে তারা কাজের প্রতি অনুকূল মনোভাব গড়ে তুলবে।
৯. অভিযোগ নিষ্পত্তি: কর্মসংস্থানে অন্যায় আচরণ বা বৈষম্যের কারণে কর্মচারীরা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা দেয়। এসব অভিযোগ সময়মতো নিষ্পত্তি করে কর্মচারীদের অসন্তোষ দূর করা যেতে পারে।
১০. উত্তম শিল্প সম্পর্ক: চাকরির সন্তুষ্টি বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করতে পারে। শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হলে শ্রমিকদের কাজের সন্তুষ্টি অবশ্যই বাড়বে।
উপসংহার: প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কাজের সন্তুষ্টি বাড়ানোর জন্য উপরে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলি কার্যকর হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ও কাজগুলো সবচেয়ে বেশি।